করোনার (Corona) জেরে আগের বছরের মতো এবারও বাঙালির প্রিয় উৎসবের রং ফিকে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে তাতে বাঙালিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। করোনাকে সঙ্গী করেই মেতে উঠেছে দুর্গাপুজো। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, মহাষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তাঁর সন্তান-সন্ততি নিয়ে মর্ত্যে অবতরণ করেন। মহাষষ্ঠীর প্রাক্কালে দুর্গার বোধনের পর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। কলকাতার( Kolkata) পাশাপাশি জেলাগুলিও মেতে উঠে পুজোর আনন্দে। দেখে নেওয়া যাক রাজ্যের বিভিন্ন জেলার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুজো।
আলিপুরদুয়ার– আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় পুজো হয়। তার মধ্যে রয়েছে বাবুপাড়া ক্লাব, স্বামী বিবেকান্দ ক্লাব, দত্তপট্টি, কালীবাড়ি যুব সংঘ, মিলন সংঘ ও বিবেকান্দ ক্লাব।
বাবুপাড়া ক্লাব– বাবুপাড়া ক্লাবের পুজো ৭৭ বছরে পড়ল। বাংলার কুটির শিল্পকে থিম করেছে এই পুজো কমিটি।পরিবেশ বান্ধব সামগ্রী দিয়ে মন্ডব তৈরি হয়েছে।করোনা বিধির পালনের উপর গুরুত্ব দিয়েছে এই ক্লাব।
স্বামী বিবেকানন্দ ক্লাব, দত্তপট্টি-আলিপুরদুয়ার স্বামী বিবেকানন্দ ক্লাবের পুজো এবার ৭৩ বছরে পড়ল।কোভিড যোদ্ধাদের নিয়ে থিম।পুলিশ,ডাক্তার নার্স রা করোনাতে পরিষেবা দিয়েছেন।
কালীবাড়ি যুব সংঘ-আলিপুরদুয়ার জংশন কালীবাড়ি যুব সংঘের পুজো এবার ৭৩ বছরে পড়ল। গোকুলের মণ্ডব।কৃষ্ণ বড় হয়েছে ওই রাজমহলের অংশ। ওখানে গোকুলের মার আগমন।বাইরের মণ্ডব গোকুলের রাজমহল।
মিলন সংঘ– এবারের পুজো ৭৯ বছরে পড়েছে। করোনা (Corona) আবহে এবার বাজেটে কাটছাট হয়েছে । যদিও জেলা স্তরে এই পুজো প্রতিবছর চমক দিত। এবার করোনার জন্য তাদের আয়োজন সীমিত।
বিবেকানন্দ ক্লাব-আলিপুরদুয়ার জংশনের এই ক্লাবের পুজো ৭৫ বছরে পড়ল।কাল্পনিক মণ্ডব।এক স্বচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগীতায় বস্ত্র বিতরন সহ নানা কর্মকান্ডে পুজোর কদিন অংশ নেবে এই ক্লাব।
শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, পুরুলিয়া প্রতিটি জেলায় ধুমধামের সঙ্গে পালিত হচ্ছে পুজো।
হুগলি : তারকেশ্বরের পদ্মপুকুর পূজা কমিটির দুর্গা পূজা এবছর ৪৩ বছরে পদার্পন করল। এবারে তাদের থিম বিবর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকৃতির যে ভয়ঙ্কর রূপ অর্থাৎ একের পর এক ঘূর্ণি ঝড়,অন্য দিকে মহামারী করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং স্বাভাবিক জন জিবনে ফিরে আসতে মায়ের কাছে আরাধনা করা হয়েছে।
পুরুলিয়া: পুরুলিয়া শহরের শশধর গাঙ্গুলী রোডের পুজো এবার বিশেষ করে মন কাড়ছে সাধারণ মানুষের। এখানকার থিম হল সংঘারিণী সর্বমঙ্গলা । একই সাথে এই পুজোয় রয়েছে দেবীর বরাভয় মূর্তি। তাই ত্রিশুলের একদিকে অসুর বধ হলেও অন্যদিকে রয়েছে পদ্ম। দেবীর হাতে আর কোন অস্ত্র নেই। অস্ত্র নেই দেবীর সন্তানদের হাতেও। তারা সবাই বরাভয় দিচ্ছেন মর্তবাসীকে। দুবছর ধরে করোনা অতিমারীর মধ্যে থাকা মানুষকে দেবীর দেওয়া এই বরাভয় এবং অন্যদিকে অশুভ শক্তিকে দমন করার চিত্র একটা আলাদা ভাবনা নিয়ে আসে।
পূর্ব বর্ধমান– জেলার উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে কয়েকটি পুজো। তারমধ্যে রয়েছে বড়শুল জাগরনীর সর্বজনীন, ট্রাফিক কলোনি বারোয়ারী দুর্গোৎসব কমিটি ও বর্ধমানের ইছলাবাদ ইয়ুথ ক্লাব।
বড়শুল জাগরনীর সর্বজনীন-৩৪ তম বর্ষে পদার্পন করল বড়শুল জাগরনীর সার্বজনীন দুর্গোৎসব। এবছরের থিম “সন্ধান চাই “। ভোগাকাঙখার কারণে অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ কখন যে তার সত্তার শিকড়কে ছিড়ে , মনুষ্যত্বকে হারিয়ে ফেলেছে তা খেয়াল করেনি। এই রকমই মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
ট্রাফিক কলোনি বারোয়ারী দুর্গোৎসব কমিটি-এবার ৯৮ তম বর্ষে পদার্পণ করলো। এবার এই পুজো কমিটির থিম “কেদারনাথ “। বাজেট ৭ লক্ষ টাকা।
বর্ধমানের ইছলাবাদ ইয়ুথ ক্লাব-এবছর ৩৫ তম বর্ষে পদার্পণ করলো। এবারের থিম “পুরাতনের পুরাতনী “। প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ গাছকে দেবতা রুপে পুজো করতো। গাছের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি এঁকে পুজো করা হত। মূলত সেই ভাবনাকেই এই মন্ডপে থিমের মাধ্যমে তুলে ধরেছে উদ্যোক্তারা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা:জেলায় একাধিক বড়-বড় পুজো হয়ে থাকে। এরমধ্যে ক্যানিং মহকুমার বৃহত্তম বাজেটের পুজো হলো ক্যানিং মিঠাখালি গ্রামবাসী সার্ব্বজনীন। ৩৪ বছরে পদার্পন করেছে পুজোটি। বড় বাজেটের পুজো এটি। পাশাপাশি মণ্ডপটিও বৃহৎ।