প্যারিস: কিংবদন্তি অনুযায়ী তলোয়ারটি ছিল দৈব শক্তির অধিকারী। এক দেবদূত এটি উপহার দিয়েছিলেন ফরাসি রাজাকে। এটিকে বলা হত, পৃথিবীর সব তলোয়ারের থেকে বেশি ধারালো। এমনকি, পাথরও নাকি কেটে ফেলতে পারে। ১৩০০ বছর ধরে এই কিংবদন্তি তলোয়ারটি আটকে ছিল ফরাসি , রোকামাদুরের এক পাথুরে দেওয়ালে। মাটি থেকে প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতায় একটি পুরোনো লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল সেটি। কিন্তু, সম্প্রতি এই কিংবদন্তি তলোয়ারটি চুরি হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ২১ জুন রাতেও তাঁরা তলোয়ারটি দেখেছিলেন। কিন্তু, ২২ জুন সকালে উঠে আর সেটিকে দেখা যায়নি। অথচ, স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী তলোয়ারটিকে কেউ নড়াতে পারত না। এমন একটি তলোয়ার, কে, কীভাবে চুরি করল, তা ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে স্থানীয় পুলিশকে।
রোকামাদুরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তলোয়ারটি তাঁদের গ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। কিংবদন্তি ব্লেডটি তলোয়ারটি না থাকায়, গ্রামটি যেন অসম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। ফরাসি সংবাদপত্র, ‘লা দেপেচে’কে স্থানীয় মেয়র ডমিনিক লেনফ্যান্ট বলেছেন, “আমরা ডুরান্ডালের অভাব বোধ করব। এটি কয়েক শতাব্দী ধরে রোকামাদুরের অংশ ছিল। এমন কোনও গাইড নেই যে পর্যটকদের এই তলোয়ারটি দেখাত না। রোকামাদুরবাসী মনে করছে, যেন তাদের শরীরের একটা অংশকে লুঠ করা হয়েছে। কিংবদন্তি বলে, এই তলোয়ারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের গ্রামের ভাগ্য।”
ডুরান্ডাল তলোয়ারের কাহিনি লেখা আছে এগারো শতকের ফরাসি মহাকাব্য ‘দ্য গান অব রোল্যান্ড’-এ। বিখ্যাত নাইট, রোল্যান্ডকে নিয়ে লেখা এই মহাকাব্য। ডুরান্ডাল ছিল নাইট রোল্যান্ডেরই তলোয়ার। তবে, একেবারে প্রথম থেকেই এই তলোয়ারের মালিক ছিলেন না তিনি। কিংবদন্তি অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীর ফরাসি সম্রাট শার্লেমেন এক দেবদূতের কাছ থেকে ডুরান্ডাল তলোয়ারটি পেয়েছিলেন। তারপর তিনি সেটি তাঁর সবথেকে বীর যোদ্ধা, নাইট রোল্যান্ডকে উপহার দিয়েছিলেন। এটি একটি অবিনশ্বর তলোয়ার ছিল বলে কথিত আছে। উপাখ্যান অনুসারে, এটি ছিল সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী তলোয়ার। রনসেভাক্স পাসের যুদ্ধে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন নাইট রোল্যান্ড। যাতে দৈব তলোয়ারটি শত্রুদের হাতে না পড়ে, তার জন্য তলোয়ারটিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন রোল্যান্ড। ধ্বংস করতে না পেরে, তিনি সেটিকে আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়েছিলেন। অলৌকিকভাবে ডুরান্ডাল কয়েকশ মাইল দূরে রোকামাদুরে পাহাড়ের গায়ে গিয়ে আটকেছিল। সেই থেকে এতদিন পর্যন্ত তলোয়ারটি সেখানেই ছিল।
পাহাড়ের যে অংশে তলোয়ারটি আটকে ছিল, সেটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচুতে। নীচ থেকে পাথরের দেওয়াল বেয়ে অত উপরে ওঠা কার্যত অসম্ভব। তার উপর তলোয়ারটি আটকে ছিল পাথরের মধ্যে। সেখান থেকে কীভাবে চোর সেটিকে নিয়ে গেল, পুলিশের কাছেও তার কোনও উত্তর নেই। তবে তারা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ডুরান্ডালের উৎপত্তির মতো এর উধাও হয়ে যাওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে রহস্য। তবে, রোকামাদুরের বাসিন্দাদের আশা, খুব শিগগিরই তাদের ডুরান্ডাল ফের তার নিজের জায়গায় ফিরে আসবে।