গাজা সিটি: গাজা ভূখণ্ডের বৃহত্তম হাসপাতাল হল আল-শিফা। আর এই আল-শিফা হাসপাতালই মঙ্গলবার পরিণত হল গণ কবরস্থলে। হাসপাতালের পরিচালক মহম্মদ আবু সালমিয়াহ জানিয়েছেন, হাসপাতালের জ্বালানী সরবরাহ শেষ। কাজেই আইসিইউ বা বলেছে যে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটও চালানো যাচ্ছে না। হাসপাতালের যত্রতত্র পড়ে রয়েছে দেহ, বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। এই বিপুল সংখ্যক মৃতদেহ সৎকার করার উপায় না থাকায়, বাধ্য হয়েই হাসপাতাল চত্বরেই তাঁরা মোট ১৭৯ জনের দেহ গণকবর দিলেন। এই ১৭৯ জনের মধ্যে রয়েছে ৭ শিশু এবং ২৯ জন আইসিইউয়ের রোগী। প্রসঙ্গত, গত রবিবার এই হাসপাতালে দুই দফায় বোমা হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েল। যার জেরে আইসিইউ-সহ হাসপাতালটির ভয়ানক ক্ষতি হয়েছিল। আগুন লেগে গিয়েছিল হাসপাতালটিতে। তারপর থেকে, আল-শিফায় চিকিৎসা পরিষেবা প্রায় বন্ধই করে দিতে হয়েছে।
মহম্মদ আবু সালমিয়াহ বলেছেন, “আমরা তাদের গণকবর দিতে বাধ্য হয়েছি। হাসপাতাল চত্বরে যত্রতত্র মৃতদেহ পড়ে ছিল। মর্গে আর বিদ্যুৎ নেই। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজা উপত্যকায় আর কোনও জ্বালানি ঢোকেনি। এদিন আইসিইউতে এক পুরুষ এবং এক মহিলার মৃত্যুর পর, শুধুমাত্র এই বিভাগেই মৃত রোগীর সংখ্যা ২৯-এ পৌঁছেছে। সর্বত্র পচা মৃতদেহের দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। সোম-মঙ্গলবার যুদ্ধের তিব্রতা এবং বিমান হামলা আগের রাতগুলির তুলনায় কম থাকায়, আমরা তাদের গণকবর দেওয়ার সদ্ধান্ত নিই।”
গণকবর দেওয়া হলেও, তা থেকেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরেই তাদের কবর দেওয়া হয়েছে। এদিকে, হাসপতালের শল্য চিকিৎসক, ডা. আহমেদ আল মোখাল্লালাতি জানিয়েছেন, দেহগুলি ঢাকার মতো কাপড় বা অন্য কোনও সুরক্ষাও তাদের কাছে নেই। তাই, আঢাকা অবস্থাতেই দেহগুলি সমাধিস্থ করা হয়েছে। ডা. আহমেদ আল মোখাল্লালাতি বলেছেন, “এটি খুবই বিপজ্জনক পদক্ষেপ। কিন্তু আমাদের কোনও উপায় নেই। শহিদদের দেহগুলি পচতে শুরু করেছিল।”
আল শিফা হাসপাতালের ভিতরে যখন গণকবর দেওয়া চলছে, সেই সময় হাসপাতালের বাইরেটা ঘিরে রেখেছে ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক। তেল আবিবের দাবি, এই হাসপাতালের সঙ্গে হামাস গোষ্ঠীর ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ সূড়ঙ্গের যোগ রয়েছে। হামাস গোষ্ঠী অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে, এদিনই ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি ৬ মিনিটের ভিডিয়ো প্রকাশ করে দাবি করেছে, হামাসের সুড়ঙ্গ সরাসরি গাজার আল-রান্টিসি চিলড্রেনস হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। হাসপাতালগুলিকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে হামাস গোষ্ঠী। রান্টিসি হাসপাতালের থেকে আল-শিফা হাসপাতালের দূরত্ব মাত্র ১৮৩ মিটার।