ব্যাঙ্কক: স্যুটকেস খুলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বিমানবন্দরের কর্তারা। একের পর এক বেরিয়ে আসছে সজারু, আরমাডিলো, কচ্ছপ, টিকটিকি, সাপ! এটা স্যুটকেস না চিড়িয়াখানা! সোমবার, থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে, মালপত্রের মধ্যে করে ১০৯টি জীবন্ত প্রাণী পাচারের চেষ্টা করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন দুই ভারতীয় মহিলা। থাইল্যান্ডের জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগ বলেছে, ওই স্যুটকেসদুটির এক্স-রে করতেই প্রাণীগুলিকে দেখা গিয়েছিল। তারপর নিরাপত্তা কর্তারা দুটি স্যুটকেসই খোলেন। উদ্ধার করা হয় ২টি সাদা সজারু, ২টি আরমাডিলো, ৩৫টি কচ্ছপ, ৫০টি টিকটিকি এবং ২০টি সাপ!
থাইল্যান্ড প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধৃত দুই ভারতীয় মহিলার না নিত্যা রাজা এবং জাকিয়া সুলতানা ইব্রাহিম। ব্যাংকক পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নিত্যা ৩৮ বছর বয়সী, আর জাকিয়ার বয়স ২৪ বছর। ব্যাঙ্কক থেকে থাই এয়ারওয়েজের চেন্নাইগামী এক উড়ান ধরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে সিকিওরিটি চেকিং-এর সময় বন্যপ্রাণীগুলি ধরা পড়ার পর, তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য, বন্যপ্রাণী আধিকারিকরা তাদেরকে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করেছেন। থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন, ২০১৫ সালের প্রাণী রোগ আইন এবং ২০১৭ সালের শুল্ক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
X-ray finds 109 live animals in women’s luggage at Bangkok airport, Thai officials say https://t.co/yTldVPhN9W pic.twitter.com/XKIEVWrQw2
— QCT World (@QCTworld) June 28, 2022
তবে, ওই দুই মহিলার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। চেন্নাই পৌঁছনোর পর ওই প্রাণীগুলিকে নিয়ে তারা কী করত, তা জানা যায়নি। স্যুটকেস থেকে উদ্ধার করার পর ওই প্রাণীদের কোথায় রাখা হয়েছে, তাও জানায়নি থাই কর্তৃপক্ষ। তবে, দীর্ঘদিন ধরেই পশু পাচার থাইল্যান্ডের এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে, ব্যাঙ্কক থেকে আসা এক ব্যক্তিকে বন্যপ্রাণ পাচারের চেষ্টার অভিযোগে চেন্নাই বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছিল। শুল্ক কর্মকর্তারা তাঁর মালপত্রের মধ্য থেকে একটি কয়েক মাস বয়সী চিতাবাঘের ছানা পেয়েছিলেন। এমনকি, গত মাসেও চেন্নাই বিমানবন্দরে শূল্ক বিভাগের কর্তারা থাইল্যান্ড থেকে বন্য প্রাণী পাচারের দু’দুটি প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছিলেন। ওই দুই ঘটনায় একটি সাদা সজারু এবং একটি বিরল প্রজাতির সাদা-ঠোঁট এবং লাল বুকের বানর উদ্ধার করা হয়েছিল।
বন্যপ্রাণ বাণিজ্য পর্যবেক্ষণ সংস্থা, ট্রাফিকের সাম্প্রকিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১৮টি ভারতীয় বিমানবন্দরে ১৪০টি বিদেশি বন্যপ্রাণী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাশপাশি উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৭০,০০০-এরও বেশি দেশী বন্যপ্রাণী। সব ক্ষেত্রে যে জীবন্ত প্রাণীই উদ্ধার হয়েছে তা নয়, তাদের দেহাংশ বা তাদের দেহ থেকে তৈরি অন্য কোনও পণ্য আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বন্যপ্রাণী আটক হয়েছে চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই। এরপর রয়েছে, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর।