ওয়াশিংটন: দুই সপ্তাহও হয়নি, আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশের এক জিমে এক দুষ্কৃতীর ছুরির আঘাতে প্রাণ গিয়েছিল ২৪ ভারতীয় ছাত্র বরুণ রাজ পুচা। এবার ওহায়ো প্রদেশে একটি গাড়ির ভিতর গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ২৬ বছরের আরও এক ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। ২৬ বছরের আদিত্য আদলাখা, ‘সিনসিনাটি মেডিক্যাল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়’-এ আণবিক ও উন্নয়নমূলক জীববিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি করছিলেন। সিনসিনাটি মেডিক্যাল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আদিত্য আদলাখার ‘আকস্মিক’ মৃত্যু অতন্ত দুঃখজনক। যারা এই কাজ করেছে, তাদের শুভবুদ্ধির অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
ঘটনাটি অবশ্য খুব সাম্প্রতিক নয়। সূত্রপাত ঘটেছিল ৯ নভেম্বর। ওই দিন ওয়েস্টার্ন হিলস ভায়াডাক্ট থেকে এক গাড়ির চালক সিনসিনাটি পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, ওই এলাকায় গুলির ছিদ্র থাকা একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার ভিতরে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিও আছেন। পুলিশ এসে দেখেছিল, একটি প্রাচীরে ধাক্কা মেরে থেমে আছে গাড়িটি। ভিতরে অচেতন অবস্থায় ছিলেন আদিত্য আদলাখা। আদিত্য আদলাখাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ইউসি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুই দিন পর, তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আদিত্যর মৃত্যুর পর অনেকগুলো দিন কেটে গেলেও, এখনও পর্যন্ত তদন্তের কোনও গতি নেই। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দিন ভোট ৬টা বেজে ২০ মিনিট নাগাদ ওই এলাকায় গুলি চলার শব্দ পাওয়া গিয়েছিল। প্রাচীরে ধাক্কা মেরে থেমে যাওয়ার আগে, আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় ধাক্কা মেরেছিল তার গাড়ি। গাড়ির চালকের আসন লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি গুলি চালানো হয়েছিল। তার থেকে পুলিশের অনুমান দুষ্কৃতীরা সম্ভবত তাকে তাড়া করেছিল। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এদিকে, শোকের ছায়া নেমে এসেছে সিনসিনাটি মেডিক্যাল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ডিন, অ্যান্ড্রু ফিলাক বলেছেন, “তাঁর মৃত্যু অত্যন্ত আকস্মিক এবং মর্মান্তিক। আমরা এর কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। ও সকলের প্রিয় ছিল। অত্যন্ত দয়ালু, রসবোধে পরিপূর্ণ, বুদ্ধিমান। ও ওর কাজের মধ্য দিয়ে নিউরোইমিউন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও ভালভাবে বুঝতে চেয়েছিল। কীভাবে নিউরোইমিউন প্রতিক্রিয়া ব্যথা কমায়, তা জানার চেষ্চা করছিল ও। ওর গবেষণা ছিল অভিনব। আমরা বলতাম পৃথিবী বদলে দিতে পারে।”
জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামজাস কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। ২০২০ সালে নয়া দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে ফিজিওলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এরপরই চিকিৎসাবিদ্যায় আরও উচ্চতর শিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকায়। মার্কিন ভারতীয় সম্প্রদায়ের অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সেই দেশে ক্রমে ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণামূলক অপরাধ বাড়ছে। আদিত্য আদলাখও সম্ভবত ‘হেট ক্রাইম’-এরই শিকার হয়েছেন।