ইস্তানবুল: এ যেন মৃত্যুপুরী! যে দিকে চোখ যাচ্ছে, সেখানেই ধ্বংসস্তূপ। তাঁর নীচ থেকে এখনও হয়তো ভেসে আসছে ক্ষীণ আর্তনাদ। যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। ভয়াবহ ভূমিকম্পে (Earthquake) ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক (Turkey) ও সিরিয়া(Syria)। মৃত্যুসংখ্যা ৭ হাজার পার করে গিয়েছে। তুরস্ক-সিরিয়ার এই দুর্দশায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে করে ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে ভারত। তবে শুধু ভারত নয়, তুুরস্কের সাধারণ মানুষ, যাদের ভূমিকম্পে কোনওরকমে প্রাণরক্ষা হয়েছে, তারাও দেশের কঠিন সময়ে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। নিজেদের জমা পুঁজি যা কিছু বেঁচেছে, তাই তুলে দিচ্ছেন। এমনই এক নজির তৈরি করল তুরস্কের এক ৯ বছরের কিশোর। সে নিজের ছোট্ট পিগি ব্যাঙ্কে যেটুকু টাকা জমিয়েছিল চকলেট কেনার জন্য, তা ত্রাণকার্যের জন্য দান করে দিয়েছে।
সোমবার ভোররাতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮। এর কয়েক মিনিট পরই ফের আরেকটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়, সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৫। এরপরই লাগাতার আফটার শক হতে থাকে। কমপক্ষে ২৯টি আফটারশক হয়েছিল তুরস্ক ও সিরিয়ায়। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে এক লহমায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দুই দেশ। এখনও অবধি ৭ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেই দেশকে সাহায্য করতে হাত বাড়িয়ে দিল ৯ বছরের এক কিশোর, যে নিজেই গত বছর ভূমিকম্প থেকে কোনওভাবে প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল।
আলপার্সলান এফে দেমির নামক ওই কিশোর একটি তাঁবুতে থাকে। গত বছরের নভেম্বর মাসে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিম অংশে দুজ়সে প্রদেশে যে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, তাতেই তাঁর ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। তখন থেকেই ঠিকানা তাঁবু। সোমবার টিভিতে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা দেখতে পায় দেমির। হাজার হাজার মানুষের অসহায়তা দেখে গত বছরের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। তাই সে তাঁর মাকে জানায়, নিজের পিগিব্যাঙ্কে যেটুকু টাকা জমিয়েছে সে, তা ত্রাণের জন্য সরকারের হাতে তুলে দিতে চায়।
ওই কিশোরের মাও বাধা দেননি। পরেরদিনই ছেলেকে নিয়ে তিনি যান টার্কিশ রেড ক্রেসেন্টের শাখায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয় পিগিব্যাঙ্ক। ভূমিকম্পে যাদের প্রাণরক্ষা হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠিও লিখেছে দেমির। সেই চিঠিতে সে লেখে, “যখন ডুজ়সে-তে ভূমিকম্প হয়েছিল, আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। সোমবার যখন আমাদের বিভিন্ন শহরে ভূমিকম্পের কথা শুনলাম, তখনও একই রকমে ভয় লেগেছে আমার। তাই আমি ঠিক করেছি আমার জমানো টাকা বয়স্ক ও শিশুদের হাতে তুলে দেব। আমি যদি চকোলেট না কিনি, তাতে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু কোনও শিশু যেন অভুক্ত না থাকে বা ঠান্ডায় কষ্ট না পায়। আমার জামাকাপড় ও খেলনাও পাঠাব শিশুদের জন্য।”