ঢাকা: পরীক্ষার কেন্দ্রে তারও থাকার কথা ছিল। প্রশ্ন-উত্তরের গোলকধাঁধায় হয়ত গভীর মগ্ন থাকত। ঘাড় ঘুরিয়ে বন্ধুর কাছে সাহায্য চাইত কি? একটা বুলেটই এইসব ভাবনায় ইতি টেনে দিয়েছে। কিন্তু, সত্যিই কি সব শেষ? না-থেকেও যে আজ কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে পরীক্ষা হলে ছিল সে। একগুচ্ছ ফুল হয়ে বেঞ্চ ‘দখল’ করে রইল। আর শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের স্মৃতি বুকের মধ্যে রেখেই এদিন পরীক্ষা দিল তার বন্ধুরা।
রবিবার (১৮ অগস্ট) দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেইমতো খুলেছে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ। এই কলেজের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ছিল বছর সতেরোর আহনাফ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে গত ৪ অগস্ট মীরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তার। এদিন পরীক্ষা হলে একটি টেবিলে একগুচ্ছ ফুল রাখে পরীক্ষার্থীরা। সেই ফুলের উপর কাগজে লেখা আহনাফের নাম। তাকে বেঞ্চে ‘বসিয়ে’ রেখেই এদিন পরীক্ষা দেয় সহপাঠীরা। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জুলাই মাসের শুরু থেকে উত্তপ্ত হতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিছুদিনের মধ্যে পদ্মাপারের দেশে সেই আন্দোলন বৃহৎ আকার নেয়। আন্দোলনে যোগ দেয় আহনাফ। টিয়ার গ্যাস ও রবার বুলেটে একবার আহত হয়েছিল। তার মা ও পিসি তাকে আন্দোলন থেকে দূরে থাকতে বলত। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদের কথা বলত আহনাফ। পরিবারের সদস্যদের বলত, বড় হয়ে এমন কিছু করবে, যার জন্য পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে গর্ব অনুভব করবে।
বয়স থমকে গিয়েছে আহনাফের। ৪ অগস্টের পর আর বয়সে বাড়বে না সে। ওইদিন মীরপুরে আন্দোলনের সময় একটি গুলি এসে বিঁধে তার শরীরে। নিথর হয়ে যায় আহনাফ। বয়সে আর না বাড়লেও ‘বড়’ হয়ে গিয়েছে সে। আজ তাকে নিয়ে গর্ব করে বন্ধুরা।
রবিবার স্কুলের সেই সহপাঠীরাই আহনাফের জন্য একটা বেঞ্চ ছেড়ে রাখে। সেখানে যে আহনাফ বসবে। সশরীরে নয়। একগুচ্ছ ফুল হয়ে। বিএএফ শাহীন কলেজে এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আহনাফের সহপাঠীদের এই হৃদয়স্পর্শী শ্রদ্ধার্ঘ্য মন ছুঁয়ে গিয়েছে অনেকের।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)