কাবুল : আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করছে তালিবান। অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল। বলা হয়েছিল, নতুন প্রজন্মের তালিবরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করবে না। কিন্তু সরকার গঠন হতেই স্পষ্ট, তালিবান আছে তালিবানেই। কোনও পরিবর্তন নেই। অন্তর্বর্তীকালীন তালিবান সরকারে ঠাঁই পেয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকাভুক্ত পাঁচ জঙ্গি নেতা। একজন রয়েছেন কট্টর ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ। আর একজন মন্ত্রীর মাথার উপর তো এক কোটি মার্কিন ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
১৫ অগস্ট তালিবানরা কাবুল দখলের পর সুপ্রিম লিডার হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজ়াদা বক্তব্য ছিল, তালিবরা আন্তর্জাতিক আইনের মেনে চলবে। ইসলামিক আইনকে আন্তর্জাতিক আইন ও সমঝোতার পথে বাধা হতে দেবে না। তালিব নেতাদের প্রতিশ্রুতির পর গোটা বিশ্বের কূটনৈতিক মহল আশায় ছিল, আফগানিস্তানের নতুন তালিবান সরকার গঠনমূলক হবে। আফগানিস্তানের সব প্রান্তের, বিশেষ করে আফগানদের সরকারে জায়গা দেওয়া হবে। কিন্তু সময় আসতেই নিজেদের মুখোশ খুলতে শুরু করে দিয়েছে তালিবান।
তালিবদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন মোল্লা হাসান আখুন্দ। তালিবদের শীর্ষনেতা। তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পরবর্তী সময়ে গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তালিবদের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংস্থা রেহবারি শুরার দীর্ঘদিনের প্রধান ছিল। এর আগে তালিবরা যখন আফগানিস্তানের সরকারে ছিল, সেইসময় মোল্লা হাসান আখুন্দ বিদেশমন্ত্রী এবং উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছে। তবে তালিবানের প্রধানমন্ত্রীর নাম রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘বিশেষ’ তালিকায় রয়েছে।
নতুন তালিব সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিরাজউদ্দিনকে। হাক্কানি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে। হাক্কানিকে জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে আমেরিকা। একাধিক আত্মঘাতী হানায় তার নাম জড়িয়েছে। কুখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে শোনা যায়। সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এই মুহূর্তে এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছে।
মোল্লা ওমরের ভাই মোল্লা আব্দুল গনি বরাদর নতুন তালিব সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী। এর আগে বরাদর তালিবানের শীর্ষ কমান্ডারের ভূমিকায় ছিল। বিশেষ করে মার্কিন সেনা অভিযানের সময়, তার ভূমিকা অত্যম্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১০ সালে পাকিস্তানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জেলেও পাঠানো হয়েছিল।
মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুবকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনই একাধিক মুখ রয়েছে তালিবান সরকারে, যাদের মোটেই ভাল চোখে দেখছে না আমেরিকা। এখনও পর্যন্ত তালিবানদের ঘোষিত এই সরকারকে কোনওরকম স্বীকৃতি দিতে তৈরি নয় মার্কিন মুলুক।
মুত্তাকি নিজেকে হেলমান্দের বাসিন্দা বলে দাবি করলেও আদতে পাটকিয়া থেকে উঠে আসা। এর আগে তালিবান সরকারের আমলে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল তার উপর। শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্বও ছিল। পরে মুত্তাকিকে কাতারে পাঠানো হয় ‘পিস কমিশন’-এর সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে কথা বলতে পাঠানো হয়।
তালিবানের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তালিবদের বিভিন্ন কার্যকলাপের তথ্য এক জায়গা থেকে অন্যত্র পাঠানোর দায়িত্ব ছিল তার উপর। টুইটার হ্যান্ডেলে নিয়মিতভাবে আত্মঘাতী হানার তথ্য পোস্ট করতে দেখা যেত। গতমাসে কাবুলে সাংবাদিক বৈঠক করার আগে পর্যন্ত তার কোনও ছবি কোথাও দেখা যায়নি। এতদিন পর্যন্ত মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করতেন, মুজ়াহিদ নামে একাধিক ব্যক্তি তালিবদের মিডিয়া অপারেশন সামলাত।