ইস্তানবুল: সপ্তাহের শুরুটাই হয়েছিল বিষাদের ছায়া দিয়ে। চলতি সপ্তাহের সোমবারই ভয়াবহ ভূমিকম্পে (Earthquake) কেঁপে ওঠে তুরস্ক (Turkey) ও সিরিয়া (Syria)। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফের আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, এবার মাত্রা ছিল ৭.৫। উদ্ধারকাজ শুরু হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক বাদে তৃতীয়বারের জন্যও ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। এরপরে আফটারশক তো লেগেই ছিল। মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই কমপক্ষে ২৯ বার আফটারশক অনুভূত হয়েছিল দুই দেশে। এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক। একই অবস্থা সিরিয়ারও। যেখানে দেশের মৃত্য়ুমিছিল দীর্ঘ হয়েই চলেছে, সেখানেই এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল বিশেষজ্ঞরা। জানানো হল, সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে নিজের অবস্থান থেকে প্রায় ৫-৬ মিটার সরে গিয়েছে তুরস্ক।
ইটালিয়ান সিসমোলজিস্ট তথা গবেষক কার্লো ডগলিওনি জানান, সোমবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পের জেরে তুরস্ক যে টেকটনিক প্লেটের উপরে অবস্থিত, তা প্রায় ৩ ফুট বা ১০ মিটার মতো সরে গিয়েছে। এর জেরে তুরস্ক পশ্চিমদিকে পাঁচ থেকে ছয় মিটার সরে গিয়েছে সিরিয়ার তুলনায়। এখনও অবধি ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও মাঝেমধ্যেই আফটারশক অনুভূত হচ্ছে।
সিসমোলজিস্ট কার্লো ডগলিওনি জানান, ভূমিকম্পের জেরে এক ধরনের ত্রুটি তৈরি হয়েছে, যাকে সিসমোলজিস্টরা “স্যালো ট্রান্সকারেন্ট” বলা হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে ভূপৃষ্ঠের অত্যন্ত গভীরে প্লেটে ভাঙন ধরেছে। এর জেরে সিরিয়ার তুলনায় তুরস্ক পশ্চিমদিকে ৫ থেকে ৬ মিটার সরে গিয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এই অনুমান করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে উপগ্রহ চিত্র পেলে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
ভূমিকম্পের জেরে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তার ব্যাখ্য়া দিয়ে তিনি বলেন, “১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২৫ কিলোমিটার চওড়া এলাকা জুড়ে ভয়ঙ্করভাবে কম্পন হয়েছে। নয় ঘণ্টার ব্যবধানে দুইবার কম্পন চরম সীমায় পৌঁছেছিল। তবে এখনও মাটিতে কম্পন হচ্ছে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ৫ থেকে ৬ ছিল। পরে ছোট ছোট আরও কম্পন হয়েছে।”
তিনি জানান, দুটি প্লেট একে অপরের দিকে এগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ তুরস্কের আরবিয়ান প্লেট দক্ষিণ-পশ্চিমে সরে গিয়েছে। এমনিতেই তুরসিক হাই সিসমিক জ়োনের উপরে অবস্থিত, যা ভূমধ্যসাগরের অন্যতম ভয়ঙ্কর এলাকা। অতীতেও এইরকম ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়েছিল তুরস্কে।