ঈপ্সা চ্যাটার্জী:
একটা মৃত্যু, আর তারপরই বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। গত বৃহস্পতিবারই প্রয়াত হয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তারপরই রাজপরিবারে এসেছে আমূল বদল। ৭৩ বছর বয়সে যুবরাজ থেকে রাজার গদিতে বসেছেন তৃতীয় চার্লস। পদোন্নতি হয়েছে প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনেরও। কিন্তু শুধু রাজপরিবারের মধ্যেই পরিবর্তন নয়, রাজপরিবারের পতনের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে রানি যেভাবে ব্রিটেন ও কমনওয়েলথের সদস্য দেশগুলির উপরে রাজত্ব চালিয়ে এসেছেন, তা রানির মৃত্যুর পর আর পরিচালন সম্ভব হবে না। রাজা তৃতীয় চার্লসের মধ্যে অনেক খামতি রয়েছে, যার কারণে তিনি ব্রিটেনের শাসক হওয়ার যোগ্য নন।
রাজাকে নিয়ে আপত্তি- ব্রিটেনের রানির প্রয়াণের পরই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, এবার কী রাজপরিবারের পতন হচ্ছে? এই জল্পনা অযৌক্তিক নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে অনেক কারণ। তবে সবথেকে বেশি যে তত্ত্বটি উঠে এসেছে, তা হল রাজা তৃতীয় চার্লসের যোগ্যতা। রানির মৃত্যুর পরই চার্লসের রাজা হওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অনেকে। সমালোচকদের বক্তব্য, ব্রিটেনের রাজা বা রানি যিনি হন, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হতে হয়। কিন্তু রাজা তৃতীয় চার্লস একাধিকবারই জানিয়েছিলেন, তিনি সক্রিয় রাজনীতির অংশ হতে চান। নিরপেক্ষ থেকে সেভাবে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
সবথেকে বেশি বয়সে ব্রিটেনের রাজা হয়েছেন চার্লস। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা সেরকম নেই। রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের পাশাপাশি চার্লসের নামে একাধিক বিতর্কও রয়েছে। ডায়নার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ, ক্যামিলিয়ার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও পরে বিয়ে নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। এর উপরে ক্যাশগেট বিতর্কও রয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে অভিযোগ উঠেছিল যে রাজা তৃতীয় চার্লস কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হামিদ বিন জাসিম বিনের কাছ থেকে ৩ মিলিয়ন ইউরো নিয়েছিলেন ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে।
রাজগদিতে বসার পরই তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাজেও নাক গলানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, রাজ পরিবার কখনওই সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু ২০১৫ সালেই প্রিন্স চার্লস ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
রাজপরিবারের ক্ষমতা বদলের পরই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ব্রিটিশ কমনওয়েলথ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়া। স্কট মরিসন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কোনও সমস্যা না হলেও, বর্তমানে অ্যান্থনি অ্যালবানিজ প্রধানমন্ত্রী হতেই ফের একবার অস্ট্রেলিয়াকে কমনওয়েলথ থেকে স্বাধীন করে রি্পাবলিকে পরিণত করার জল্পনা শুরু হয়েছে। ২০২১ সালেই একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার জনগণের একটি বড় অংশই রিপাবলিক দেশের নাগরিক হিসাবে পরিচিত হতে চায়। অ্যালবানিজের নিয়োগের পর এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে গিয়েছে।
১৯৯৯ সালেও অস্ট্রেলিয়া রিপাবলিক হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই সময় ৫৪ শতাংশ জনগণই ব্রিটেন কমনওয়েলথের সদস্য থাকার সপক্ষেই ভোট দেওয়ায়, সেই সময় আলাদা হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরায় এবং বর্তমানে প্রিন্স চার্লস ব্রিটেনের রাজগদিতে বসায়, অস্ট্রেলিয়া ফের আলাদা হয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। সূত্রের খবর, শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয়, একই পথ অনুসরণ করতে চায় কানাডাও। তবে এই বিষয়ে সে দেশের তরফে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
রানির মৃত্যুর পর একদিকে যেমন শোকবার্তা উপচে পড়েছে, তেমনই টুইটারে আরেকটি হ্যাশট্যাগও ট্রেন্ড করছে, তা হল #EndMonarchy । ব্রিটেনের জনগণের একাংশই চান, এবার রাজ পরিবার ও তাদের শাসন শেষ হোক। একদিকে সরকার, অন্যদিকে রাজপরিবার, দুইয়ের নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে চলা কঠিন।