Doctor’s deepfakes: বিখ্যাত ডাক্তারদের ‘ডিপফেক’, চলছে বিপজ্জনক কেলেঙ্কারি!

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Sep 15, 2024 | 3:54 PM

Doctor's deepfakes: বিখ্যাত, পরিচিত ডাক্তাররাও এবার শিকার হচ্ছেন 'ডিপফেক' প্রযুক্তির। তাদের বিশ্বস্ততাকে অপব্যবহার করার জন্য ডিজিটালভাবে তৈরি করা হচ্ছে তাদের 'ডিপফেক' ভিডিয়ো। আর তারপর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র। জীবনও হতে পারে বিপন্ন।

Doctors deepfakes: বিখ্যাত ডাক্তারদের ডিপফেক, চলছে বিপজ্জনক কেলেঙ্কারি!
প্রতীকী ছবি (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি)
Image Credit source: Meta AI

Follow Us

লন্ডন ও প্যারিস: বিখ্যাত, পরিচিত ডাক্তাররাও এবার শিকার হচ্ছেন ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তির। তাদের বিশ্বস্ততাকে অপব্যবহার করার জন্য ডিজিটালভাবে তৈরি করা হচ্ছে তাদের ‘ডিপফেক’ ভিডিয়ো। আর তারপর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ডিপফেক ভিডিয়োগুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুতর রোগের ‘অলৌকিক নিরাময়’-এর দাবি করা হচ্ছে। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এতে রোগীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, যে সকল ডাক্তারবাবুর মুখ সাধারণ মানুষ টিভিতে দেখে থাকে, তাদের একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। আর এরই সুযোগ নিয়ে ডায়াবেটিস-এর মতো বিভিন্ন রোগের অপরীক্ষিত ওষুধের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, ওই সকল বিজ্ঞাপনে সংশ্লিষ্ট রোগের পরীক্ষাগারে প্রমাণিত প্রথম সারির ওষুধগুলির বিরুদ্ধ প্রচার পর্যন্ত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সেগুলি খেলে রোগীদের মৃত্যু হতে পারে, তার বদলে তাদের অপরীক্ষিত ওষুধ খাওয়া উচিত। আর এটা কোনও একটা দেশে আটকে নেই, প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

এই বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালকে ব্রিটিশ চিকিৎসক জন করম্যাক জানিয়েছেন, “সাঝধারণ মানুষ এই ডিপফেক ভিডিয়োগুলি সরল মনে বিশ্বাস করেন।” তিনি জানিয়েছেন, যে সকল চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে মুখ দেখান, সাধারণ মানুষের মনে বিশ্বস্ততার একটা ছবি তৈরি হয়। তাই ডিপফেক ভিডিয়োতে তাঁরা যতই অবিশ্বাস্য দাবি করুন, সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ হেনরি আজদার জানিয়েছেন, এই বছরের শুরু থেকেই ব্যাপকভাবে ডাক্তারদের ডিপফেক ছবি-ভিডিয়ো তৈরি করা শুরু হয়েছে। তাঁর মতে, টেলিভিশনে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া ডাক্তারদের পরিচয় জাল করে নিশানা করা হচ্ছে মূলত বয়স্ক দর্শকদের।

ফরাসী টিভিতে প্রায়ই মুখ দেখা যায় সেখানকার ডাক্তার মিশেল সাইমসকে। এএফপিকে গত মে মাসেই তিনি বলেছিলেন, তাঁর ছবি ব্যবহার করে কেলেঙ্কারির বিষয়ে ফেসবুকের মালিক সংস্থা মেটার বিরুদ্ধে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন। ব্রিটিশ টেলিভিশনে নিয়মিত দেখা যায় চিকিৎসক হিলারি জোনসকে। তাঁর ভিডিয়ো ব্যবহার করেও এই ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ডা. জোনস উচ্চ রক্তচাপের নিরাময় হিসেবে একটি আগাছার আঠা থেকে তৈরি ওষুধ বিক্রি করছেন। বলাই বাহুল্য সেই ওষুধটি ভুয়ো। বাধ্য হয়ে তাঁর আর কোনও ডিপফেক ভিডিয়ো ও ছবি ব্যবহার করে এমন কোনও কাজ করা হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে নজর রাখতে একজন তদন্তকারী নিয়োগ করেছেন তিনি। ডা. জোন্স বলেছেন, “এককি ভিডিয়ো ডিলিট করানো হলে, পরের দিন অন্য নামে ভিডিয়ো তোলা হচ্ছে।”

ফরাসি শিক্ষাবিদ তথা এআই বিশেষজ্ঞ ফ্রেডেরিক জুরি জানিয়েছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছে, তাতে ডিপফেক ছবি, অডিয়ো এবং ভিডিয়োগুলির গুণমান অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, “আজ কয়েক বিলিয়ন ছবি আমাদের আয়ত্বে। আমরা এমন অ্যালগরিদম তৈরি করতে পেরেছি যা কোনও ছবিতে দেখানো সমস্ত কিছুর মডেল তৈরি করতে পারে এবং সেগুলিকে পুনরুত্পাদন করতে পারে। একেই আমরা জেনারেটিভ এআই বলি।”

তবে, শুধু সম্মানিত চিকিৎসকরাই নন, এই ধরণের ডিপফেক ভিডিয়োর শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন বিতর্কিত গবেষক বা অলৌকিক নিরাময়ের দাবি করার ব্যক্তিত্বরাও। কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে ফরাসি গবেষক দিদিয়ের রাউল্টের বিরুদ্ধে। তাঁরও বেশ কয়েকটি ডিপফেক ভিডিয়ো ব্যবহার করে ভুয়ো ওষুধ বিক্রি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয় ন্যাচারোপ্যাথ, বারবারা ও’নিল আবার বেকিং সোডা দিয়ে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবি করে সমালোচিত হয়েছিলেন। তাঁরও ডিপফেক ভিডিয়ো ব্যবহার করে ধমনী পরিষ্কারের ভুয়ো ওষুধ বিক্রি করা হয়েছে। এআই বিশেষজ্ঞ অ্যাজদারের মতে, এই ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের অনুগামীদের মধ্যে তাঁদের ব্যপক জনপ্রিয়তা থাকে। তাই তাঁদের ডিপফেক ব্যবহার করা স্বাভাবিক।

কী ভাবছেন? উপরের সব ঘটনাগুলিই ইউরোপের, তাই ভারতে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা নেই? তাহলে খুবই ভুল করবেন। বিশেষ করে ভারত আস্থার দেশ, বিশ্বাসের দেশ। এখানে চিকিৎসকদের পাশাপাশি বহু ধর্মগুরুর উপরও মানুষ আস্থা রাখে। কাজেই, তাদের ডিপফেক ভিডিয়ো ব্যবহার করে ভারতেও ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়ো ওষুধের বিজ্ঞাপন দেওয়া হতে পারে। কিন্তু, কীভাবে আটকানো যাবে এই প্রবণতা? এআই দিয়েই কি এটা আটকানো যাবে? বিশেষজ্ঞরা এখনও সেই বিষয়ে আশাবাদী নন। ততদিন পর্যন্ত, বিড়াল-ইঁদুরের খেলা চলবেই।

Next Article