ওয়াশিংটন: সূত্রের খবর, গত সপ্তাহান্তে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ড্রোন হামলায় আল কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সরকারিভাবে এখনও ঘোষণা না করা হলেও, সিএনএন, ফক্স নিউজ-সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলেই অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছিল, মার্কিন ড্রোন হামলায় আল কায়েদার বড় কোনও নেতার মৃত্যু হয়েছে। ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাইডেন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, এই সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে কোনও অসামরিক ব্যক্তি হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরে এই বিষয়টি ঘোষণা করবেন বলে জানা গিয়েছে।
মৃত্যুর সময় জাওয়াহিরির বয়স ছিল ৭১ বছর। ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর ১১ বছর পরও এই গোষ্ঠী যে সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক প্রতীক হিসেবে রয়ে গিয়েছে, তা তারই কৃতিত্ব। এক সময় সে লাদেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিল। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সরাসরি জাওয়াহিরিকে ধরার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য ২ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। ২০২১ সালের জুনে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী কোনও অঞ্চলে বসবাস করছে। তার শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই তাকে প্রচারে ভিডিয়োয় দেখানো হচ্ছে না।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, জাওয়াহিরি এক বিশিষ্ট মিশরীয় পরিবারের মানুষ। তার ঠাকুর্দা, রাবিয়া আল-জাওয়াহিরি ছিলেন কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইমাম। তার মামা আবদেল রহমান আজম ছিলেন আরব লীগের প্রথম সচিব। আমেরিকার মাটিতে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসবাদী হামলা, অর্থাৎ ৯/১১ হামলার পরিকল্পনাতেও সাহায্য করেছিল সে। ওই ভয়াবহ হামলার বিষয়ে এপ্রিল 2002 সালে প্রকাশিত একটি ভিডিয়ো বার্তায় জাওয়াহিরি বলেছিল, “যে ১৯ জন ভাইয়ের মৃত্যুবরণ করেছেন এবং সর্বশক্তিমান আল্লার কাছে তাদের আত্মাহুতি দিয়েছেন, সর্বশক্তিমান আল্লা তাদের বিজয় দান করেছেন। যা আমরা এখন উপভোগ করছি।”
Zawahiri was pretty much as much responsible for 9/11 as Osama was. Justice delayed but finally served. pic.twitter.com/LUC6X96b5z
— snow? (@snowmanomics) August 1, 2022
২০১১ সালে মার্কিন সেনার হাতে বিন লাদেনের মৃত্যুর পর, জাওয়াহিরিই আল কায়েদার সর্বোচ্চ নেতা হয়েছিলেন। ২০০১ সালের ওই হামলার পর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের তোরা বোরা অঞ্চলে মার্কিন হামলার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল। তবে ওই হামলায় তার স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল। তারও অনেক আগে, ১৯৮১ সালে মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল সে। সেটাই ছিল জঙ্গি হিসাবে তার আত্মপ্রকাশ।
তার আগে ডাক্তারি পড়েছিল সে। পড়তে পড়তেই মিশরীয় সরকারকে উৎখাত করে মৌলবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ষড়ষন্ত্র শুরু করেছিল। সাদাত হত্যার দায়ে তিন বছর কারাগারে কাটানোর পর মুক্তি পেয়ে সে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুজাহাদিন যোদ্ধাদের চিকিৎসা করা শুরু করেছিল সে। সেই সময়ই বিন লাদেনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছল তার। ১৯৯৮ সালে জাওয়াহিরি তার নিজের মিশরীয় ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীকে আল কায়েদার সঙ্গে একীভূত করে দিয়েছিল। তারপর বিভিন্ন দেশে মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য মার্কিন স্থাপনায় হামলার পিছনে ছিল তার মস্তিষ্ক।