নিউ ইয়র্ক: আবেগ, অভিমান, আড্ডা, তর্ক, রাগ কিংবা উদ্বেগ- এক কাপ চায়ের প্রস্তাব এলে কোনও অবস্থাতেই ‘সাহস’ করে আর না বলা হয়ে ওঠে না বাঙালির। হতে পারে চিন তার জন্মস্থান, তবে চা নিয়ে বাঙালির চিরকালীন ‘চিনচিনে’ ব্যথা। শুধু বাংলা নয়, বাঙালি যেখানেই থাকুক না কেন, সেখানেই শুরু ‘চায়ে পে চর্চা’। সেই ভরসা থেকেই নিউ ইয়র্কের (New York) রাস্তায় কলকাতার চায়ের স্বাদ বিলোচ্ছেন সান্যাল ভ্রাতৃদ্বয়।
অয়ন সান্যাল ও অনি সান্যাল। দুই ভাইয়েরই বয়স ৩০-এর কোঠায়। আমেরিকায় জন্ম হলেও কলকাতায় তাঁদের শিকড়। মা-বাবা আটের দশকে কলকাতা থেকে ম্যাসাচুসেটসে চলে যান। গরমের ছুটিতে ভারতে আসতেন তাঁরা। কলকাতার অলিগলিও ঘুরতেন।
প্রচুর স্ট্রিট ফুডের সঙ্গে পরিচয় হয় সে সময়। রাস্তার ধারে খাবারের দোকানগুলিতে এমন কিছু সস কিংবা মশলার স্বাদ অয়নরা পেয়েছেন, যা ধরতে পারাই মুশকিল। কলকাতায় ফুটপাথের চায়ের দোকানই তাঁদের চা নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা জুগিয়েছে। দ্য বেটার ইন্ডিয়াকে অয়ন এক সাক্ষাৎকারে জানান, “কলকাতায় এসে খবরের কাগজে মুড়ে ঝালমুড়ি খেতাম। আর মা কলেজে পড়ার সময় যেখানে চা খেতেন, সেখানে চা খেতাম। দীর্ঘদিন সেখানে চা খেয়েছি। একটা সময় বুঝেছি এই চায়ের প্রতি একটা অদ্ভুত নেশা তৈরি হয়েছে। সঙ্গে এই ঐতিহ্যটার প্রতি একটা সম্মান কাজ করে।”
দেশের বিভিন্ন জায়গায় চা ভিন্ন স্বাদের। কলকাতায় দুধ, চিনিতে চা পাতা ফেলে ফুটিয়ে গরম ভাঁড়ে চায়ের যে স্বাদ, তা মুগ্ধ করত দুই ভাইকে। আর আমেরিকায় ভারতীয় চায়ের চাহিদা থাকলেও যথাযথ চা পাওয়া মুশকিল। আমেরিকায় চা খেয়ে তৃপ্তিও মিলত না সেভাবে। এরপরই নিউ ইয়র্কের রাস্তায় খোলা হল ‘কলকাতা চায়ে কো.’। সালটা ২০১৯।
অয়নের কথায়, “কেউ যদি আদা, এলাচ, সঙ্গে কড়া চা পাতা ঠিক পরিমাণে একসঙ্গে মেলাতে পারে, তা হলে সেই চায়ের মতো স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যায় না।” কলকাতা চায়ে’ দুই ভাইয়ের দায়িত্ব ভাগ করা আছে। অনি রিটেলের দিকটা দেখেন, অয়ন দেখেন ব্যবসার মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং। শুধু দোকানে বসেই নয়, চাইলে কলকাতা চায়ে’র স্বাদ পেতে পারেন অনলাইনেও। তারও ব্যবস্থা রেখেছেন অয়ন, অনিরা।
শুকনো চা, মশলা মেশানো চা অনলাইনে পাওয়া যায়। অন্যান্য রেস্তোরাঁতেও বিক্রি করেন তাঁদের চা। দুই ছেলের এই ব্যবসায় সবথেকে খুশি তাঁদের মা। অয়নের কথায়, মা সকলকে দুই ছেলের ব্য়বসার কথা বলেন।