ঢাকা: চলতি বছরেই বাংলাদেশের নির্বাচন। তার আগে ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী তথা সেই দেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি-র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)। সোমবার রাতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকলে, বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে ঢাকার ‘এভারকেয়ার হাসপাতালে’ ভর্তি করা হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডই বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সময় তাঁর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
সূত্রের খবর, খালেদা জিয়ার শরীরে জ্বর রয়েছে। সেই সঙ্গে গায়ে ব্যথা থাকার কথাও জানিয়েছেন বিএনপি নেত্রী। তাঁর এক্স-রে ও আল্ট্রাসোনোগ্রাম করানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর পেয়ে গভীর রাতেই তাঁর গুলশানের বাসভবনে ছুটে গিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে ছিলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ বিএনপির নেতারা। খালেদার ছোটভাই শামীম এস্কান্দারের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে। এর আগেও তাঁকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস-সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন তিনি।
এর আগে এপ্রিলের শেষে, হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে। ২৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। তার কয়েকদিন আগে খালেদার বেশকিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিল বিএনপি। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা ছাড়াও, আর্থ্রাইটিস, এবং দাঁত ও চোখের সমস্যা রয়েছে বিএনপি নেত্রীর। ২০২২ সালের ২৮ অগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ও এভারকেয়ার হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। তারপর থেকে প্রতি মাসেই নিয়মিত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
দুটি দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়, ২০১৮ সালে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। কিন্তু, তাঁর বয়স ও অসুস্থতার কারণে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের আবেদন বিবেচনা করে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, তিনি কোনও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনও কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না। তাঁকে বাড়িতে থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। এদিকে, অসুস্থতার কারণে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তারা জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে তাঁর উন্নতমানের চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষতি হয়ে গেলে, তার দায় আওয়ামি লিগ সরকারকেই নিতে হবে বলে সাফ জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যেতে দিচ্ছে না হাসিনা সরকার।