Bangladesh: ২১ দিনের মধ্যে রহস্যজনকভাবে খুন দুই রিক্সাচালক, চুলের সিঁথিই ধরিয়ে দিল হত্যাকারীদের

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

May 01, 2023 | 9:45 PM

Bangladesh police: ২১ দিনের মধ্যে একই জায়গায় দু-দুটি হত্যা হয়েছিল। কোনও সূত্র পাচ্ছিল না পুলিশ। কারণ, দুই ঘটনারই কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। অবশেষে চুলের সিঁথিই ধরিয়ে দিল হত্যাকারীদের।

Bangladesh: ২১ দিনের মধ্যে রহস্যজনকভাবে খুন দুই রিক্সাচালক, চুলের সিঁথিই ধরিয়ে দিল হত্যাকারীদের
প্রতীকী ছবি

Follow Us

ঢাকা: ২১ দিনের মধ্যে একই জায়গায় দু-দুটি হত্যা হয়েছিল। নিহতরা দুজনেই ছিলেন রিক্সাচালক এবং দুজনেই ব্যাটারি-চালিত রিক্সা চালাত। হত্যাদুটি ঘটেছিল গভীর রাতে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকায়। প্রথম হত্যাটি হয়েছিল ১৩ মার্চ। খুন হয়েছিলেন রিক্সাচালক মিরাজ হোসেন। এরপর ৩ এপ্রিল খুন হন আরেক রিক্সাচালক স্বপন ইসলাম। রিকশা ছিনিয়ে নিতেই যে তাঁদের খুন করা হয়েছিল সেই বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিল ঢাকা পুলিশ। কিন্তু, কে বা কারা এই হত্যা করেছে, সেই সম্পর্কে কোনও সূত্র পাচ্ছিল না পুলিশ। কারণ, দুই ঘটনারই কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। অবশেষে দ্বিতীয় হত্যার পর, ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার অস্পষ্ট ছবি দেখেই হত্যাকারীদের শনাক্ত করল পুলিশ। চুলের সিঁথিই ধরিয়ে দিল হত্যাকারীদের। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত ছিল তিনজন। তাদের মধ্যে দুইজনকে ধরা গিয়েছে। যদিও এখনও পলাতক এই ছিলতাইবাজ-হত্যাকারী দলের নেতা।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকার যে অঞ্চলে খুনের ঘটনাগুলি ঘটেছে, রাতে সেই অঞ্চলটি নির্জন থাকে। ওই এলাকায় কোনও সিসিটিভি ক্যামেরাও ছিল না। পুলিশ জানায়, প্রথম খুনের পর ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। কিন্তু, তাতে কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় খুনের পর ওই এলাকার একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অস্পষ্টভাবে এক ব্যক্তির ছবি পাওয়া যায়। এমনিতে, সকলে চুলে বাঁদিকে সিঁথি করলেও, ওই ব্যক্তির চুলের সিঁথি ছিল ডানদিকে। আর এটাই শেষ পর্যন্ত ধরিয়ে দিয়েছে ছিনতাইবাজ-হত্যাকারীদের। সিসিটিভি ক্যামেরার ওই ছবি হাতে আসার পর, পুলিশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা চোরদের মধ্যে কে চুলে ডান দিকে সিঁথি করে, তার সন্ধান শুরু করেছিল।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রথমে ডেমরা অঞ্চলে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চুরি করে, এমন পাঁচটি চক্রকে শনাক্ত করা হয়। তিনটি চক্রের মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু, তাদের মধ্যে চুলে ডান দিকে সিঁথি করা ওই ব্যক্তি ছিলেন না। কেউ তাঁকে চিনতেও পারেনি। তবে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের একজন জানান, ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ার বাসিন্দা নয়ন হতে পারে। এরপরই পুলিশ নয়নের দুই সহযোগী, মহম্মদ জাহিদ ও মহম্মদ নঈমকে গ্রেফতার করে। সব মিলিয়ে পাঁচটি ছিনতাই চক্রের ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের জেরার মুখে ভেঙে পড়ে জাহিদ ও নঈম। পরে তাঁরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করে। তারাই নিশ্চিত করে যে চুলে ডান দিকে সিঁথি করা ব্যক্তিটি আর কেউ নয়, নয়ন।

জবানবন্দিতে জাহিদ ও নঈম আরও জানিয়েছে, নয়নের নেতৃত্বে ৬ থেকে ৭ জনের একটি চক্র গত ছয় মাস ধরে ডেমরা অঞ্চলে ব্যাটারিচালিত রিক্সা ছিনতাইয়ে জড়িত ছিল। সাধারণত, রাত ১২টার পর তারা ছিনতাই করতে বের হত। শুরুতে যাত্রী সেজে রিকশায় উঠত। রিক্সাচালককে এমন কোনও গন্তব্যে যাওয়ার কথা বলা হত, যেখানে যাওয়ার পথে কোনও নির্জন জায়গা পড়ে। সেই জায়গায় এলে চালকের গলায় আচমকা গামছা পেঁচিয়ে ধরা হত। পিছনে নিজেদের কোনও রিক্সায় থাকত তাদের অন্যান্য সহযোদীরাও। চালক ছিনতাইয়ে বাধা দিলে ওই প্যাঁচানো গামছা দিয়েই শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করা হত। একই কৌশলে ২১ দিনের মধ্যে হতভাগ্য দুই চালককে হত্যা করে তাঁদের রিক্সা ছিনতাই করা হয়েছিল। ঢাকা পুলিশ আরও জানিয়েছে, পুরনো ব্যাটারিচালিত রিক্সা ব্যাটারিসহ বাজারে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। রিক্সা বেশি পুরনো না হলে আরও বেশি দাম পাওয়া যায়। চুরির পরই রিক্সাগুলির যন্ত্রাংশ খুলে ফেলা হত। রিক্সার রংও বদলে ফেলা হত। যাতে পরবর্তী সময়ে আর রিক্সাগুলি শনাক্ত না করা যায়।

Next Article