ঢাকা: বয়স তার ৫-৬ বছর হবে। বুধবার (৮ মার্চ) সকাল থেকে বাংলাদেশের ঢাকার গুলিস্তানে বিস্ফোরণস্থলে এসে বাবার খোঁজ করছে ছোট্ট সামির। কিন্তু, কেউ তার বাবার খোঁজ দিতে পারেনি। নিহতের তালিকাতেও তার বাবার নাম নেই। শুধু সামির একাই নয়, তার মতো আরও অনেকেই নিখোঁজ স্বজনদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। গতকাল রাতে উদ্ধার কাজ বন্ধ রেখেছিল দমকল বাহিনী। বাড়িটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি ছিল। এদিন, প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে। তারপর, ফের উদ্ধারকাজে নেমেছে দমকল বিভাগ। এক সরকারি কর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে পাঁচ ব্যক্তি নিখোঁজ বলে দাবি করেছিলেন তাঁদের নিকটাত্মীয়রা। তাদের মধ্যে দুইজনকে এদিন মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। ফলে এই বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯। এর মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে এবং তাঁদের মরদেহ আত্মীয়দের হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই সরকারি কর্তা।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল পাঁচটা নাগাদ গুলিস্থানের এক সাততলা ভবনে এক তীব্র বিস্ফোরণ ঘটেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল ভবনটির দেওয়াল ভেঙে এসে পড়ে রাস্তায়। বহু মানুষকেও উড়ে এসে রাস্তায় পড়তে দেখা গিয়েছে। রাস্তার থাকা বহু গাড়ি-বাসেরও ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয়েছে আশপাশের ভবনগুলিরও, ভেঙে পড়েছে কাচ। বাসযাত্রী থেকে শুরু করে পথচারীরা পর্যন্ত আহত হয়েছেন, মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। মুহূর্তে এক অদ্ভূত স্তব্ধতা নেমে এসেছিল গোটা এলাকায়। তারপর রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, ট্রাক, অ্যাম্বুল্যান্স -যে যেভাবে পেরেছেন, হতাহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন। হতাহতদের হাত-পা, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে এদিক-ওদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন হাসপাতালে আছেন পঞ্চাশ জনেরও বেশি মানুষের চিকিৎসা চলছে। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও চিকিৎসাধীন বহু মানুষ। বার্ন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে ভর্তি থাকা আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সবারই ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে, ক্ষতি হয়েছে শ্বাসনালির। তাঁদের মধ্যে তিনজন আছেন আইসিইউতে এবং দুজনকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ রাখতে হয়েছে।
এদিকে, এখনও পর্যন্ত এই বিস্ফোরণের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী শাখার সদস্যরা ঘটনাস্থলে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বোমা বিস্ফোরণ বা নাশকতার কোনও প্রমান পাননি। ডগ স্কোয়াডকেও কাজে লাগানো হয়েছে। আবার গ্যাস বা অন্য কিছু থেকে এই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটেছে কিনা, তাও তারা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দমকল বিভাগ। কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলেই তাঁরা বিস্ফোরণের কারণ জানাতে পারবেন।