ঢাকা: “দেহ পাওয়া গিয়েছে, তোরা কবর খোঁড়।” এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তানভীর হাসান। দুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের দেহ। পরিবারের একটা ক্ষীণ আশা ছিল, যদি বেঁচে থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুর সোয়া বারোটা নাগাদ, মেহেদীর দেহ মিলতেই সেটুকুও মুছে গেল। সেই সঙ্গে শেষ হল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকার বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত বহুতল ভবনের উদ্ধারকাজ। ঢাকার দমকল বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবনটিতে আর কোনও হতাহতের দেহ নেই। ঢাকা দমকলে বিভাগের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেছেন, “গতকাল দুটি দেহ পাওয়া গিয়েছিল। এদিন সকাল থেকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। নিখোঁজ মেহেদী হাসান স্বপনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। তাঁর স্বজনেরা এটি মেহেদীর দেহ বলে নিশ্চিত করেছেন।” ফলে সব মিলিয়ে ঢাকার রহস্যময় বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২২ জনের দেহ উদ্ধার করা হল।
গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা নাগাদ, ঢাকার গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকার এক বহুতল ভবনে জোরাল বিস্ফোরণ ঘটেছিল। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না মেহেদী হাসান স্বপনকে। ক্ষতিগ্রস্ত সাততলা ভবনটির বেসমেন্টে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে একটি দোকান ছিল। ওই দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন মেহেদী। বেসমেন্টের দক্ষিণ দিকে সিঁড়ির নিচে মেহেদীর দগ্ধ দেহটি পড়ে ছিল বলে জানিয়েছেনদমকল কর্মীরা। বিশাল চেহারা মেহেদীর ওজন ছিল ১২০ কেজির মতো। তাঁর মরদেহ বহনে দুটি বডিব্যাগ ব্যবহার করতে হয়েছে। তাঁর দাদা তানভীর জানিয়েছেন, দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন মেহেদী। শোকে মূহ্যমান তাঁর স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে। মেহেদীর দেহ উদ্ধারের পর তানভীর বলেন, “ও (মেহেদী) ছিল সবার ছোট। ওই সবার আগে চলে গেল।”
মেহেদীর দেহ উদ্ধারের পর, আর এই উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে। দমকল বিভাগের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেছেন, “ভবনে আর কোনও ভিকটিম নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। উদ্ধার অভিযান আর চলবে কিনা, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এদিকে বিস্ফোরণে সাততলা ভবনটির বেসমেন্ট ও দুটি তলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়িটি যে কোনও সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত সাততলা ভবনটি স্থিতিশীল করার কাজ শুরু করতে চলেছে বাংলাদেশের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ভবনটি যাতে ভেঙে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। শুক্রবারের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হবে।