ঢাকা: জেল থেকে মুক্তি পেল বাংলাদেশের বিখ্যাত জল্লাদ শাহজাহান ভুঁইয়া। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছে সে। ২০০১ সাল থেকে সে প্রধান জল্লাদ হিসেবে ফাঁসি কার্যকর করায় দায়িত্ব পালন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৬ আসামি ও বহুল আলোচিত ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী ৬ আসামী। এ ছাড়া আলোচিত খুনি এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর করে শাহজাহান। ৩১ বছর ৬ মাস ৭ দিন কারাভোগের পর মুক্তি পেল সে। রবিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে কেরানিগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয় সে। এই সব ফাঁসি কার্যকর করার জন্য মোট শাস্তির মেয়াদ থেকে ১০ বছর কমেছিল শাহজাহানের। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যখন শাহজাহান বের হয়ে আসে তখন তার মুখে ছিল হাসি। আর পরনে ছিল সাদা শার্ট-প্যান্ট। সে বের হওয়ার সময় তার সঙ্গে ১০-১৫ জন কারারক্ষী ছিলেন।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ডুকরে কেঁদে ওঠে শাহজাহান। নিজের দীর্ঘ কারাগার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা জানায়। শাহজাহান বলে, “৩০ বছর অনেক সময়। এতদিন জেল খাটার পর এখন আর কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়াতে চাই না। আর এখন আমার ক্ষমতা নেই অপরাধ করার।” ২৬ জন আসামিকে ফাঁসি দেওয়া প্রসঙ্গে সে বলেছে, “আমি বিচার প্রক্রিয়া শেষে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলাম। তাই কারাগারে নিয়ম অনুযায়ী সাজা প্রাপ্ত আসামিদের কোন না কোন কাজ করতে হয়। আমি একটু সাহসী ছিলাম বলে আমাকে জল্লাদের কাজে নিয়োগ করা হয়। এসব ফাঁসি আমার সিদ্ধান্তে আমি দিইনি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি দিয়েছি।” কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সে এখন কোথায় যাবে এই প্রশ্নের জবাবে জল্লাদ শাহজাহান বলেছে, “আমার কোনও বাড়ি ঘর নেই। শুনেছি আমার এক বোন ও ভাগ্নি আছে। তবে তাদের সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। কারণ জেলে আসার পর আমার সেই বোনের জন্ম হয়েছে।” প্রসঙ্গত, একটি মামলায় শাহজাহানের ১২ বছর এবং অপর এক মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়।
১৯৮৯ সালে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে প্রথম একজনের ফাঁসি কার্যকরে দায়িত্ব পালন করে শাহাজাহান। এর পর মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের সময় এলেই তার ডাক পড়ত। আট বছর এই কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেয়। একটি ফাঁসির রায় কার্যকর করতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী থাকে। ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন করে কারাদণ্ড মকুব হয়। এ ছাড়া কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদের প্রশিক্ষণ দিত। সাড়ে ৩১ বছর জেলে থাকার পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর জরিমানার ১০ হাজার টাকা কারাগার কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে।