ঢাকা: সুইসাইড নোটে লেখা আছে বাবা ‘রেপিস্ট’, ‘অমানুষ’। এমনকি, তাঁর মৃত্যুর জন্য ‘বাবা দায়ি’, লেখা আছে এমন কথাও। পুলিশের দাবি, এই সুইসাইড নোট লিখেই এক ১২ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সানজানা মোসাদ্দিকা। তবে, তাঁর সহপাঠীরা আত্মহত্যার তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আর এর পিছনে হাত রয়েছে তাঁর বাবা শাহিন আলমের, সুইসাইড নোটে যাঁকে ওই ছাত্রী তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ি করেছেন। এই ঘটনা নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২৭ অগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে । ঢাকা শহরের দক্ষিণখান এলাকার এক বহুতলের ছাদ থেকে ছাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন সানজানা মোসাদ্দিকা। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই বহুতলটির নীচ থেকে ওই তরুণীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এক স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। শনিবার, বিকেল ৪টে নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঢাকা পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা একটি সবুজ রঙের কাগজে লেখা চিরকুট উদ্ধার করেছে। চিরকুটে লেখা আছে, “আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। একটা ঘরে পশুর সাথে থাকা যায়, কিন্তু অমানুষের সাথে না। একজন অত্যাচারী রেপিস্ট, যে কাজের মেয়েকেও ছাড়ে নাই। আমি তার করুণ ভাগ্যের সূচনা।” নিহত সানজানার মাও, তাঁর স্বামী শাহিন আলমের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন। তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে, ওই সুইসাইড নোটটি মৃতা সানজানারই লেখা কি না, তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সানজানা মোসাদ্দিকার সহপাঠীরা রবিবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন করে দাবি করেন, সানজানাকে হত্যা করেছেন তাঁর বাবা শাহিন আলম। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ছাত্রাছাত্রীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘সানজানা হত্যার বিচার চাই’, ‘আত্মহত্যা নয়, হত্যা’। সানজানার সহপাঠীদের দাবি, কেউ ১২তলা থেকে পড়ে গেলে তাঁর শরীর থেঁতলে যাওয়ার কথা। কিন্তু সানজানার শরীরে সে রকম কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না, বরং তাঁর হাতে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার চিহ্ন ছিল। এমনকি, শরীরে লাঠি দিয়ে মারার দাগও রয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। তাই তাঁকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেই মনে করছেন তাঁর সহপাঠীরা।
পুলিশও জানিয়েছে, হাতের লেখা যাচাই না করে, চিরকুটটি সানজানারই লেখা কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। তার আগে তারা সানজানার মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে’র মর্গে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত শাহিন আলমের সঙ্গে তার স্ত্রী, অর্থাৎ, সানজানার মায়ের কিছুদিন আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছিল। তার পরপরই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল শাহিন। এই ঘটনা নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সানজানা। অবসাদের চিকিৎসাও চলছিল। তাঁর ঘর থেকে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনও পেয়েছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, শনিবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের থেকে ছাদের দরজার চাবি চেয়েছিলেন সানজানা। বলেছিলেন, কাপড় শুকোতে দিতে যাবেন। এরপরই বহুতলের নিচে তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখেছিলেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই সানজানাকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিকেল চারটে নাদাগ চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেছিলেন।
সানজানার সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সানজানার বাবা শাহিন আলম দ্বিতীয় বিয়ে করায় পর থেকেই, এই বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে সানজানার মায়ের প্রায়ই ঝগড়া হত। সানজানার বাবা প্রায়ই তাঁর মাকে মারধর করতেন। সানজানা বাধা দিতে যেতেন। তাঁর কপালেও বাবার মারধর জটত। গত রমজানে মারের চোটে তিনি তিন দিন বিছানা থেকে উঠতে পর্যন্ত পারেননি। একবার তাঁর হাতও ভেঙে গিয়েছিল। তারমধ্যে বাড়ি থেকে টাকা না দেওয়ায় সর্বশেষ সেমিস্টার পরীক্ষাতেও অংশ নিতে পরেননি সানজানা। শনিবারও টাকা নিয়েই বাবার সঙ্গে ঝগড়া বেধেছিল তাঁর, এমনটাই দাবি করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শাহিন আলমকে দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি উঠেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে এখনও আটক বা গ্রেফতার না করা হলেও, ঘটনার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।