ঢাকা : সমস্য়া ছিল ছোটবেলা থেকেই। জন্মের পর থেকেই শরীরে জন্মাতে শুরু করেছিল শিকড়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল পরিবারের। আবার উঠে দাঁড়াতে পেরেছিল অসুস্থ কিশোর। কিন্তু শেষ ২ মাসে আবার এক অদ্ভুত উপসর্গ দেখা দিয়েছে। রিপন দাস নামের ওই কিশোরের চামড়া ক্রমশ কালো হয়ে যাচ্ছে। শরীরে নেই কোনও জোর। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও হারাচ্ছে সে।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের এক গ্রামের বাসিন্দা রিপন। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই এমন জটিল রোগে শক্তি হারাচ্ছে সে। আর পাঁচজনের মতো তারও ইচ্ছে করে খেলাধুলা করতে, পড়াশোনা করতে। কিন্তু সে ক্ষমতা নেই তার। চিকিৎসা চলছে, তবে আদৌ রিপন সুস্থ হবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
রিপনের বাবা মহেন্দ্র রাম দাস জানান, রিপনের জন্মের ২ মাস পর থেকেই তার চামড়ায় এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। স্থানীয় ভাষায় যাকে ট্রি ম্যান সিনড্রোম বলা হয়ে থাকে, সেটাই রিপনের শরীরে শণাক্ত করেছিলেন চিকিৎসকেরা। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা হয় কিশোরের। ২০১৩ সালে অস্ত্রোপচারও করা হয় রিপনের। তিনটি অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা সুস্থ হয় রিপন। এরপর স্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে গত ২ মাস ধরে।
পরপর কয়েকবার জ্বর হয় রিপনের। আর তারপর থেকেই ক্রমশ চামড়া কালো হয়ে যাচ্ছে। রিপন জানাচ্ছে, সে আর উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না। উঠে বসতে গেলেও শরীরে ব্যাথা লাগছে তার। ক্রমশ মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে সে।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগে রিপনের নতুন কিছু সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসেন রিপনের অভিভাবকেরা। চিকিৎসকের দাবি, কোনও এক কবিরাজের কাছ থেকে তেল নিয়ে রিপনকে মাখানো হচ্ছিল। তার জেরেই ঘটে বিপত্তি। তিনি জানান, রিপনের যে রোগটি রয়েছে, বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস, যার কারণ তেমনভাবে জানা যায় না। আপাতত চিকিৎসা চলছে রিপনের। চেষ্টা চলছে তাকে সুস্থ করার।
এর আগে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিরল এই সিনড্রোমে হিসেবে আবুল বাজানদার ও সাহানা খাতুনকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় হয়েছিল বাংলাদেশে। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা হয় তাঁদের।
ট্রি-ম্যান সিনড্রোম হল এক ধরনের বিরল জেনেটিক রোগ। এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার চিকিৎসার হদিশ পাননি বিশেষজ্ঞরা। এই রোগে সারা শরীরে শিকড়ের মতো জন্মাতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার হওয়ার পর কিছুটা সুরাহা হয়।