ব্রাসেলস: মাঙ্কিপক্স কি করোনাভাইরাস মহামারির মতোই ভয়ানক হয়ে উঠবে? ফের কি গোটা বিশ্ব থমকে যাবে, আটকে যাবে কোয়ারেন্টাইনের বেড়াজালে? এখনও পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে না পৌঁছলেও, এমনটা ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। রবিবার, বিশ্বের ১৪ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাল রোগ। যুক্তরাজ্যে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই অবস্থায় রবিবার, ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণ মোকাবিলায় ২১ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন বিধি জারি করল বেলজিয়াম। সেই দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এদিন ঘোষণা করেছে, ‘যারা এই ভাইরাসে সংক্রামিত হবে, তাদের তিন সপ্তাহের জন্য নিভৃতবাসে থাকতে হবে’।
ডেইলি মেইল-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেলজিয়ামে এখনও পর্যন্ত ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণের চারটি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর প্রতিটিই সেই দেশের বন্দর শহর অ্যান্টওয়ার্প-এ আয়োজিত এক সাম্প্রতিক উত্সবের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। আক্রান্ত চারজনই ওই উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। তাই, সেখান থেকেই বেলজিয়ামে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রত্যেককেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, চিকিৎসা চলছে। দেশে কোয়ারেন্টাইন বিধি জারি করা হলেও ‘বেলজিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ বলেছে, তাদের দেশে মাঙ্কিপক্সের বৃহত্তর প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি কম। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণের ক্ষেত্রে এমনিতে নিভৃতবাসের প্রয়োজন হয় না। তবে কোভিড সংক্রমণের পর এখন অনেকেরই অনাক্রম্যতা কমে গিয়েছে। তাই সতর্ক থাকা উচিত।
‘মাঙ্কিপক্স’ এমনিতে গুটিবসন্ত বা চিকেনপক্স গোত্রেরই রোগ। তবে, এটি গুটিবসন্তের থেকে কম মারাত্মক, মৃত্যুর হার ৪ শতাংশেরও নিচে। বেশিরভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চিকিত্সা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে, এর আগে কখনও আফ্রিকার বাইরে মহামারি আকারে এই রোগ ছড়াতে দেখা যায়নি। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার পর, রবিবার এই রোগ সনাক্ত করা হয়েছে মধ্য প্রাচ্যেও। আফ্রিকার বাইরে ‘মাঙ্কিপক্সের’ এই অস্বাভাবিক বিস্তারই কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই বছরের পর বছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই রোগকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বর্তমানে প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ি মাঙ্কিপক্সের কোনও নতুন স্ট্রেন।
‘মাঙ্কিপক্স’ রুখতে প্রথম দেশ হিসাবে বেলজিয়াম কোয়ারেন্টাইন জারি করলেও, বর্তমানে সবথেকে দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যে। রবিবার, ব্রিটেনে আরও ১১ জনের ‘মাঙ্কিপক্স’ পরীক্ষার রিপোর্ট ইতিবাচক এসেছে। ফলে, সব মিলিয়ে সেই দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০-তে। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী এর মধ্যে, একটি শিশুও রয়েছে। বর্তমানে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে সে। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই, এই প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ‘নিষ্ক্রিয়তার’ জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে ব্রিটিশ সরকার।
রবিবার, ইসরাইল এবং সুইজারল্যান্ডও ‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত করেছে। ফলে, এই ভাইরাল রোগ বর্তমানে মোট ১৪ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি এবং সুইডেন – এই ১২টি দেশে অন্তত ৯২ টি মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।