বস্টন: প্রায় এক বছর পর কলঙ্ক-মুক্ত হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক ভারতীয় চিকিৎসক। বিমান যাত্রার সময়, এক ১৪ বছর বয়সী কিশোরীর পাশে বসে হস্তমৈথুন করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল ওই ৩৩ বছর বয়সী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তবে, তিন দিনের শুনানির পর, তাঁকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে বস্টন ফেডারেল কোর্ট।
বস্টন শহরেই থাকেন ডাক্তার সুদীপ্ত মোহান্তি। ২০২২ সালের মে মাসে হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্সের এক উড়ানে হনলুলু থেকে বস্টন যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর পাশেই বসেছিল ১৪ বছরের এক কিশোরী। উড়ানে সুদীপ্তর গা থেকে কম্বল পড়ে গিয়েছিল। তারপরই ওই কিশোরী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, ভারতীয় চিকিৎসকের প্যান্টের চেন খোলা ছিল এবং তিনি বীর্যপাত না হওয়া পর্যন্ত কিশোরীকে দেখে হস্তমৈথুন করছিলেন। মেয়েটি অভিযোগ করেছিল, কম্বল পড়ে যাওয়ার পর ওই দৃশ্য দেখে সে প্রবল ‘বিতৃষ্ণা এবং অস্বস্তি’ নিয়ে অন্য এক আসনে উঠে গিয়েছিল। তার সঙ্গে তার দাদু-দিদা ছিল। তাদেরকেও সে ঘটনাটি জানিয়েছিল।
ওই বছরেরই ২৭ মে, ‘অশ্লীল কাজ করার’ অভিযোগে ডাক্তার সুদীপ্ত মোহান্তিকে গ্রেফতার করেছিল এফবিআই। ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে, তাঁর ৯০ দিন পর্যন্ত জেল, ৫০০০ ডলার জরিমানা এবং আরও শাস্তি হতে পারত। কিন্তু প্রথম থেকেই কোনও অন্যায় করেননি বলে দাবি করেছিলেন এই ভারতীয় চিকিৎসক।
বিচার চলাকালীন, সুদীপ্ত মোহন্তীর আশেপাশের আসনে বসা অন্তত ১৫ জন যাত্রীও জানান, উড়ানে থাকাকালীন তাঁরাও কিছু দেখেননি। মেয়েটি যে অভিযোগ করেছে, তার সঙ্গে ঘটনার কোনও মিল ছিল না। ওই উড়ানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরাও জানান, তাঁরা অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেননি। আদালতে ডাক্তার মোহান্তির আইনজীবী জানান, এই ভারতীয় একজন ‘প্রতিভাবান এবং নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক’। কোনও অপরাধের ইতিহাস নেই তাঁর। চলতি সপ্তাহে বস্টন ফেডারেল আদালত চিকিৎসককে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছে।
এই ঘটনাকে ‘অদ্ভুত দুঃস্বপ্ন’ বলেছেন ডাক্তার সুদীপ্ত মোহান্তি। তিনি জানিয়েছেন, এই অভিযোগ তাঁর পুরো পরিবারের জন্যই কঠিন ছিল। কেন তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি করেছিল ওই কিশোরী, সেই সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, “সেই উড়ানে আমার বাগদত্তাও আমার পাশে বসে ছিল। আমরা কেউই বুঝতে পারিনি, কেন আমায় এভাবে দোষী করা হল। আমি একজন চিকিত্সক হিসাবে অন্যদের সেবা করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি। এই মিথ্যা অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন চিকিৎসার জগৎ থেকে সরে যাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখের ছিল। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে আদালত সঠিক রায় দিয়েছে।”