রিও ডি জেনেইরো:
ডাক্তারকে ঈশ্বরের প্রতীরূপ বলে মনে করা হয়। ডাক্তারদের মানুষ অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। তাঁরাই যদি মানুষের এই আস্থার সুযোগ নিতে শুরু করেন, তাহলে মানুষ আর কাকে বিশ্বাস করতে পারবে? সম্প্রতি এমনই প্রশ্ন উঠেছে ব্রাজিলে। সেই দেশের রিও ডি জেনেইরো শহরে এক গর্ভবতী মহিলাকে তাঁর প্রসবের সময় ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে সেখানকার এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে!
‘ডেইলি মেইল’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রিও ডি জেনেইরোর মুলহার হাসপাতালে। অভিযুক্ত চিকিৎসক, ৩২ বছরের জিওভানি কুইন্টেলা বেজেরা। সে পেশায় একজন অ্যানাস্থেসিস্ট, অর্থাৎ রোগীদের অস্ত্রোপচারের আগে অজ্ঞান করা কিংবা অস্ত্রোপচারের জায়গাটিকে অবশ করার কাজ করত। মাত্র কয়েক মাস আগেই অ্যানেস্থেসিয়ার কোর্স শেষ করেছিল সে। এরপর মুলহার হাসপাতালেই তার চাকরি হয়েছিল।
প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন নির্যাতিতা মহিলা। সাধারণভাবে প্রসবে সমস্যা দেখা দেওয়ায়, চিকিৎসকরা তাঁর অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের আগে তাঁকে অজ্ঞান করার দায়িত্ব ছিল জিওভানি কুইন্টেলা বেজেরার। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। তাই তাঁর উপর ভরসা ছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বেজরা অ্যানেস্থেসিয়ার সঠিক ডোজ দিচ্ছে কি না, তা যাচাই করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার অজান্তে অপারেশন থিয়েটারে একটি গোপন ক্যামেরা স্থাপন করেছিল। সেই তৃতীয় নেত্র-সম ক্যামেরাতেই ধরা পড়ে গিয়েছে তার কীর্তিকলাপ।
কী দেখা গিয়েছে গোপন ক্যামেরায়? দেখা যায়, ওই মহিলাকে অচেতন করার ক্ষেত্রে কোনও ভুলচুক করেনি বেজেরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন ওই গর্ভবতী মহিলা। তবে, এরপরই ওই চিকিত্সক রোগিনীর মুখে তাঁর পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করায় বলে অভিযোগ। তারপর তাঁকে মৌখিকভাবে ধর্ষণ করে। এর আগেও সে এমন অপকর্ম করে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই রকম অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটিয়েছে বেজরা, এমনই সন্দেহ করা হচ্ছে।
অপারেশন থিয়েটারের গোপন ক্যামেরায় ওই দৃশ্য ধরা পড়ার পরই, তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাকে তুলে দেওয়া হয় রিও ডি জেনেইরোর পুলিশের হাতে। তাকে বর্তমানে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় কারাগার বাঙ্গুতে রাখা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই নক্কারজনক ঘটনার জন্য তার ৮ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
পুলিশি তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালেও একটি চিকিত্সা সংক্রান্ত ত্রুটির অভিযোগ উঠেছিল বেজেরার বিরুদ্ধে। তার এবং অন্য একজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে সোয়াইন ফ্লুকে, মূত্রনালীর সংক্রমণ ধরে নিয়ে ভুল চিকিৎসা করার অভিযোগ রয়েছে। ওই ভুল চিকিৎসার ফলে অন্তত ২৩ জন মহিলা রোগী কোমায় চলে গিয়েছিলেন।