ইসলামাবাদ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারত যখন ক্রমাগত যুদ্ধ বন্ধের আবেদন করেছে, পাকিস্তান একই সময়ে সেই যুদ্ধ থেকে ফায়দা তুলেছে। বিবিসি উর্দু-র এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত বছর ইউক্রেনকে গোলাবারুদ সরবরাহ করে ৩৬ কোটি ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৩০০০ কোটি টাকার বেশি) উপার্জন করেছে অর্থ সংঙ্কটে ভুগতে থাকা পাকিস্তান। এর জন্য ‘গ্লোবাল মিলিটারি’ এবং ‘নর্থরপ গ্রুম্যান’ নামে দুটি মার্কিন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি করেছিল ইসলামাবাদ। ইসলামাবাদের সরকার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তবে, মার্কিন ফেডেরাল প্রোকিওরমেন্ট ডেটা সিস্টেমের তথ্যের উল্লেখ করে, বিবিসি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনকে ১৫৫ মিমি শেল বিক্রি করেছিল পাকিস্তান। ২০২২-এর ১৭ অগস্ট ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের এই চুক্তিগুলি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। রাওয়ালপিন্ডির পাক বিমান বাহিনী ঘাঁটি, নুর খান থেকে সাইপ্রাসের ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি, আকরোতিরি হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে অস্ত্রগুলি পৌঁছে দিয়েছিল একটি একটি ব্রিটিশ সামরিক কার্গো বিমান। এর জন্য নুর খান থেকে মোট পাঁচবার উড়েছিল বিমানটি।
এই চুক্তিগুলি হয়েছিল পাকিস্তানের বহুদলীয় জোট, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট-এর শাসনাকালে। ইমরান খানের সময় নয়। গত বছরের এপ্রিলে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট। তার আগেই ফেব্রুয়ারি মাসে ইমরান রাশিয়া সফর করেছিলেন। সেই সময়ই ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইউক্রেন সংকট পাকিস্তানের রাজনৈতিক আলোচনার অংশ হয়ে উঠেছিল।
পাক বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য বিবিসি উর্দুর এই রিপোর্ট উড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রির কথা সরাসরি অস্বীকার করেছে তারা। দাবি করেছে, দুই দেশের বিরোধে তারা ‘কঠোর নিরপেক্ষতা’ নীতি বজায় রেখেছে। গত জুলাইয়ে পাকিস্তান সফরের সময়, ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবাও, পাকিস্তানের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছিলেন। তবে বিবিসি উর্দুর দাবি, স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের তথ্যেও বলা হয়েছে, ইসলামাবাদের অস্ত্র রফতানি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩,০০০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১-২২-এ পাকিস্তান ১ কোটি ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলারের অস্ত্র রফতানি করেছে। সেখানে ২০২২-২৩-এ তাদের অস্ত্র রফতানির আয় পৌঁছেছে ৪১ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারে। প্রসঙ্গত, আর্থিক সঙ্কটে থাকা পাকিস্তানকে ইউক্রেনের পক্ষ নেওয়ার জন্য প্রথম থেকেই চাপ দিয়ে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভূমিকা এই ক্ষেত্রে কতটা, সেই নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।