বেজিং: কী বলা যেতে পারে, ভুতের মুখে রামনাম? গত কয়েক বছর ধরে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ-সহ বিভিন্ন দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে চিন। চিনা সংবাদমাধ্যমগুলিতে সাধারণত ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয় এবং ভুয়ো আখ্যান তৈরি করা হয়। সেই চিনের মুখেই নাকি ভারত এবং নরেন্দ্র মোদীর শাসনের প্রশংসা! হ্যাঁ, যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক, এটাই সত্যি। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমসে’, গত মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) একটি প্রকাশিত নিবন্ধ লিখেছেন সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক ঝাং জিয়াডং। সেই নিবন্ধে, তিনি ভারতের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ভারতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরা হয়েছে এই নিবন্ধে। চিন সরকার তথা চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অনুমোদন ছাড়া গ্লোবাল টাইমসে কিছুই ছাপা হয় না। কাজেই এই নিবন্ধকে চিনের সরকারি বক্তব্য বলেই ধরা যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
এই নিবন্ধে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর আমলে, ভারত কৌশলগতভাবে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারত এখন নিজেদের আখ্যান তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতি, বিশেষ করে চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের মনোভাব বদলে গিয়েছে। আগে, ভারত-চিন বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভারসাম্যহীনতা নিয়ে আলোচনায়, ভারতীয় প্রতিনিধিরা চিন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেই দিকেই তাকিয়ে থাকতেন। কিন্তু এখন তারা ভারতের রফতানি সম্ভাবনার উপর বেশি জোর দিচ্ছে।
ভারতীয় বৈশিষ্ট্য
শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও, ভারত পশ্চিমের তালে তাল মেলানোর বদলে, ‘ভারতীয় বৈশিষ্ট্য’-কে তুলে ধরছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভারতীয় উত্সের উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। ঔপনিবেশিক ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বিশ্বকে পরামর্শ দেওয়ার ভূমিকা নিচ্ছে।
বিদেশ নীতি
নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিদেশ নীতিতে ভারতের কৌশলগত চিন্তাভাবনার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। যার ফলে, ভারত যে ক্রমে একটি মহান শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশ এবং অন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাহগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নীত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মাত্র ১০ বছরেরও কম সময়ে, বহু মেরুর বিশ্বে ভারত এখন একটি অন্যতম মেরুতে পরিণত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এই গতিতে পরিবর্তন খুব কমই দেখা যায়।
নতুন ভূ-রাজনৈতিক ফ্যাক্টর
ভারতের অত্যাশ্চর্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, শহুরে প্রশাসন ইত্যাদির প্রশংসা করে, এই নিবন্ঘে বলা হয়েছে, এই রূপান্তরিত, শক্তিশালী এবং দৃঢ় ভারত, একটি ‘নতুন ভূ-রাজনৈতিক ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছে। বহু দেশকেই এই ভারত নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।