লন্ডন: চ্যান্সেলর হিসাবে চিনের প্রতি তিনি নরম মনোভাব দেখাতেন। বারবারই বিরোধীরা এই অভিযোগ তুলতেন ঋষি সুনাকের বিরুদ্ধে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমে, যেন সেই বদনামই ঘোঁচাতে চাইলেন তিনি। সোমবার, তিনি চিনকেই ব্রিটেন তথা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য ‘সবচেয়ে বড় হুমকি’ বলে চিহ্নিত করলেন। তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারতকেও নিশানা করেছে চিন। চিনের ‘প্রযুক্তিগত আগ্রাসন’ ঠেকাতে ন্যাটোর মতো একটি সামরিক জোট গঠনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ঋষি সুনাক।
পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী সুনাক এদিন বলেছেন, “এই শতাব্দীতে ব্রিটেন এবং বিশ্বের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি চিন এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। চিনা সাইবার-হুমকির মোকাবিলা করতে এবং পরস্পরের সঙ্গে সর্বোত্তম প্রযুক্তি নিরাপত্তার ভাগ করে নেওয়ার জন্য স্বাধীন দেশগুলিকে নিয়ে আমি একটি নতুন আন্তর্জাতিক জোট তৈরি করব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে নিশানা করেছে চিন। সারা বিশ্বের দেশগুলিকে নিয়ে একটি বিস্তৃত জোট তৈরি করার বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
চিনের বিরুদ্ধে সুনাক, ইউক্রেনে রাশিয়ার ফ্যাসিবাদী আক্রমণকে সমর্থন করা, তাইওয়ানকে হুমকি দেওয়া, শিনজিয়াং এবং হংকং-এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও করেছেন। তিনি বলেন, “তারা (চিন) উন্নয়নশীল দেশগুলিরকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সম্পদ দখল করছে, তাদের মাথায় কূটনৈতিক বন্দুক ধরার জন্য ঋণের চক্রকে ব্যবহার করছে। শিনজিয়াং এবং হংকং-সহ তাদের নিজেদের জনগণকেই নির্যাতন করে। তারা ক্রমাগত নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে বিশ্ব অর্থনীতিতে কারচুপি করে নিজেদের সুবিধায় কাজে লাগায়।”
এর পাশাপাশি, সুনাক এদিন ব্রিটেনের প্রযুক্তি চুরি এবং ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করেছেন চিনের বিরুদ্ধে। সুনাক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি যুক্তরাজ্যের সমস্ত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটগুলি বন্ধ করে দেবেন। প্রসঙ্গত, বিশ্বের সবথেক বেশি সংখ্যক কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট রয়েছে যুক্তরাজ্যেই, মোট ৩০টি। চিনা সংস্কৃতি এবং ভাষা শিক্ষার জন্যই বিশ্বজুড়ে এই ইনস্টিটিউটগুলি চালানো হয়। চিনা সরকারই এই ইনস্টিটিউটগুলি পরিচালনর যাবতীয় অর্থ দেয়। তবে সমালোচকদের দাবি, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটগুলি আসলে চিনা কমিউনিস্ট সরকারের প্রচার-হাতিয়ার। সুনাকও এদিন বলেছেন, “স্কুলে ম্যান্ডারিন ভাষা শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের সমস্ত অর্থই কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ব্যয় করে। এর ফলে চিনেরই প্রচার হয়।”
সুনাক, এদিন চিনের বিরুদ্ধে শিল্পক্ষেত্রেও গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগ করেছেন। বেজিং-কে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্রিটেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রসারিত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। তিনি বলেন, “আমি চিনা শিল্প গুপ্তচরবৃত্তি মোকাবিলায় ব্রিটিশ ব্যবসাক্ষেত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বৃহত্তর সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এমআই৫-এর পরিধি প্রসারিত করব। আমরা সরকার এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে সঙ্গে নিয়ে এমন একটি টুলকিট তৈরি করব যা সংস্থাগুলিকে মেধা সম্পত্তি রক্ষায় সহায়তা করবে।