কলম্বো: প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার বিপদের সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। কিন্তু দেশের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠল এবার শ্রীলঙ্কাই। কারণ সে দেশের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে চিনা জাহাজ। দূর থেকেই ব্যালেস্টিক মিসাইল ট্রাক করতে সম্পন্ন স্যাটেলাইটযুক্ত এই অত্যাধুনিক জাহাজের হঠাৎ শ্রীলঙ্কায় আসা নিয়েই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন ভারত। যদিও চিনের তরফে জানানো হয়েছে, ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতেই এই জাহাজ আসছে শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা বন্দরে। শ্রীলঙ্কার তরফেও এটিকে রুটিন মহড়া বলেই জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আগামী ১১ থেকে ১২ অগস্টের মধ্যেই শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা বন্দরে এসে পৌঁছবে এই চিনা জাহাজ। উয়ান ওয়াং ক্লাস জাহাজে প্রায় ৪০০ ক্রু রয়েছে। এই জাহাজ যেমন ব্যালেস্টিক মিসাইল ও স্যাটেলাইট ট্রাক করতে পারে, তেমনই আবার এর মধ্যে প্যারাবোলিক ট্রাকিং অ্যান্টেনা ও বিভিন্ন সেন্সরও রয়েছে, যা দূর থেকেই বিভিন্ন বিপদ আঁচ করে নেয়।
শ্রীলঙ্কার বন্দরে চিনের যুদ্ধজাহাজ আসা নিয়ে ভারত উদ্বেগে রয়েছে কারণ, ভারত মহাসাগরে ঢুকে শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি এলেই চিনা জাহাজ ওড়িশায় যে প্রায় নিয়মিত ভারতীয় মিসাইল পরীক্ষা হয়, তার উপরে নজরদারি চালাতে পারবে। ব্যালেস্টিক মিসাইল সেন্সরের মাধ্যমেও দেশের জল সীমান্ত রক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা নৌ-বাহিনীর জাহাজে থাকা ব্যালেস্টিক মিসাইলগুলির ক্ষমতা ও তা কতটা দূর অবধি যেতে পারে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে যাবে চিনের। জানা গিয়েছে, মালাক্কার বদলে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রপথ ধরে শ্রীলঙ্কার জলসীমায় প্রবেশ করবে এই জাহাজ। চিনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই জাহাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, গোটা পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। দেশের নিরাপত্তা যাতে সুনিশ্চিত থাকে, তার জন্য় যথাযথ পদক্ষেপও করা হবে প্রয়োজন অনুসারে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালেও শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা বন্দরে চিনা সাবমেরিন এসেছিল। সেই সময়ও ভারতীয় নৌ-সেনা সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
শ্রীলঙ্কার তরফে জানানো হয়েছে, ভারতের উদ্বেগ সম্পর্কে তারা অবগত। চিনের তরফে ভারত মহাসাগরে নজরদারীর জন্য একটি জাহাজ পাঠানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে তাদের। যেহেতু জাহাজটি পরমাণু অস্ত্র বহনকারী নয়, সেই কারণে তাকে শ্রীলঙ্কা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুধু চিন নয়, রাশিয়া, জাপান ও ভারতও শ্রীলঙ্কার জলসীমায় ঢোকার চেষ্টা করলে, তাদের অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে শ্রীলঙ্কা যে চরম আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে, তার অন্য়তম কারণ চিন। সে দেশের কাছ থেকে চড়া সুদের হারে ঋণ নেওয়ার পরই আরও ডুবে গিয়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। নিজেদের ঋণখেলাপী ঘোষণা করতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। পাশপাশি, হামবানতোতা বন্দরটিও একটি চিনা সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য লিজে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ফলে এই পরিস্থিতিতে চিনের যাবতীয় দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় নেই।