বেজিং: মোটেই অবস্থাপন্ন নন সে। তবে, মহিলাদের নজর কাড়তে নিজেকে ধণী বাবার ছেলে বলে পরিচয় দিত। একজনকে বিয়েও করেছিল। তবে, সম্পর্ক ছিল আরও চার মহিলার সঙ্গে। মজার বিষয়, পাঁচ মহিলাই থাকতেন একই আবাসন কমপ্লেক্সে। তার মধ্যে এক মহিলা আবার থাকতেন, তাঁর স্ত্রী যে ভবনে থাকতেন, সেই একই ভবনে। এত কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও, এই পাঁচ মহিলার কেউ একে অপরের সম্পর্কে কিছু জানতেন না। ওই একই ব্যক্তি যে তাঁদের সকলকে ঠকাচ্ছে, সকলের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করছে, তাও বুঝতে পারেননি কেউ। এই ভাবে কেটে গিয়েছিল চার-চারটি বছর। তবে, সামান্য ভুলে অবশেষে ধরা পড়ে গিয়েছে ওই ব্যক্তির জালিয়াতি। চাঞ্চল্যকর এই প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে চিনে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম জিয়াওজুন। উত্তর-পূর্ব চিনের জিলিন প্রদেশে থাকত সে। তার বাবা পার্ট-টাইম নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। আর জিয়াওজুনের কাজ করতেন এক বাথহাউসের পরিচারিকা হিসাবে। কিন্তু, নিজেকে দ্বিতীয় প্রজন্মের ধনী বলে পরিচয় দিত জিয়াওজুন। অর্থাৎ সে মহিলাদের বলত, তার বাবা বিশাল বড়লোক। কাজেই তারও অর্থের কোনও অভাব নেই। এইভাবেই সে তার প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে ফেলেছিল জিয়াওজিয়া নামে এক মহিলাকে।
নিজেকের ধন সম্পদের পরিচয় দিতে, জিয়াওজিয়াকে সে বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল পণ্য কিনে দিতে। অবশ্য কোনোটাই আসল ছিল না, সবগুলিই ছিল জাল পণ্য। জিয়াওজিয়া গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে বিয়ে করেছিল জিয়াওজুন। বিয়ের পর, জিয়াওজিয়ার কাছে জিয়াওজুনের সব মিথ্যে ধরা পড়ে গিয়েছিল। তিনি জানতে পেরেছিলেন, জিয়াওজুনের হাতে টাকাকড়ি প্রায় নেই বললেই চলে। ধন-সম্পদ সম্পর্কে সে সবটাই মিথ্যা বলেছিল। বিবাহ বিচ্ছেদ করার কথা ভেবেছিলেন জিয়াওজিয়া। কিন্তু পরে, বিচ্ছেদ না করেই জিয়াওজুনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন তিনি। একাই তাদের সন্তানকে বড় করার সিদ্ধান্ত নেন।
গৃহহীন জিয়াওজুন সাহায্যের নতুন উত্স খুঁজছিল। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল। এবার তার ফাঁদে ধরা দিয়েছিলেন জিয়াওহং নামে আরেক মহিলা। তাঁর আস্থা এবং প্রেম জিততে একই কৌশল ব্যবহার করেছিল জিয়াওজুন। এমনকি, তাকে ভবিষ্যতে বিয়ে করার স্বপ্নও দেখিয়েছিল। বিয়ের পর তারা যে বাড়িতে থাকবে, সেটির সংস্কার কথা বলে জিয়াওহংয়ের কাছ থেকে ১,৪০,০০০ ইউয়ান (ভারতীয় মুদ্রায় ১৬,৫১,৪০০ টাকা) ধার করেছিল। এরপর সে তার প্রাক্তন স্ত্রী যে ভবনে থাকত, সেই একই ভবনে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল। জিয়াওহং গর্ভবতী হওয়ার পর, তার সঙ্গে সেখানে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিল।
মজার বিষয়, এখানেই থামেনি জিয়াওজুন। তবুও, তার প্রতারণা সেখানে থামেনি। ওই একই কৌশলে একই আবাসিক কমপ্লেক্সের আরও তিন মহিলার সঙ্গে প্রতারণা করে সে। জিয়াওমিন এবং জিয়াওক্সিন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, আর জিয়াওলান কাজ করতেন নার্স হিসেবে। এই তিনজনের সঙ্গেও প্রেমের অভিনয় করে সে তার ধনী জীবনযাপন বজায় রেখেছিল। তাদের থেকেও সে যথাক্রমে ১৫,০০০ ইউয়ান (2,100 মার্কিন ডলার), ১০,০০০ ইউয়ান এবং ৮,০০০ ইউয়ান ধার নিয়েছিল। কিন্তু, জিয়াওক্সিনের কাছে তার প্রতারণা ধরা পড়ে যায়।
তাঁর কাছে একটা ব্যাগ রাখতে দিয়েছিল জিয়াওজুন। জিয়াওক্সিনকে ব্যাগটা কখনও না খুলতে বলেছিল সে। কিন্তু, সন্দেহ হওয়ায় সেই ব্যাগটা খুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটি। তিনি দেখেছিলেন ব্যাগে জাল নোট রয়েছে। হতবাক জিয়াওক্সিন সেই জাল নোটের বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ করে। অবশেষে, পুলিশ জিয়াওজুনকে গ্রেফতার করে। আর জিয়াওজুনের এই অবাক করা প্রতারণার কাহিনি ফাঁস হয়। পাঁচ মহিলারই নিজেদের মধ্যে কখনও না কখনও দেখা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা বুঝতেও পারেননি, একই ব্যক্তি তাঁদের সকলকে একসঙ্গে ঠকাচ্ছে।