Syria Unrest Explained: গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়ায় আসাদ সাম্রাজ্যের পতন? ঠিক কী হচ্ছে সিরিয়ায়?

Syria Crisis: হিজবুল্লা, যাকে এতদিন সমর্থন করেছে আসাদ সরকার, তারাও নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে বিপদ বুঝেই। অন্যদিকে, মজা লুটছে আমেরিকা। হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, সিরিয়া তাদের বন্ধু নয়। তাই পরিস্থিতি খারাপ দেখেও তাদের কিছু করার নেই।

Syria Unrest Explained: গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়ায় আসাদ সাম্রাজ্যের পতন? ঠিক কী হচ্ছে সিরিয়ায়?
সিরিয়ায় আসাদ সাম্রাজ্যের পতন।Image Credit source: PTI & Getty Images
Follow Us:
| Updated on: Dec 08, 2024 | 3:54 PM

জ্বলছে আগুন। চারিদিকে বারুদের গন্ধ। যুদ্ধ যুদ্ধ আবহ চারিদিকে। চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়েই ছুটছেন সাধারণ মানুষ। দু’মুঠো অন্নের ব্যবস্থাটুকু যদি করা যায়…সামনে যে ঘোর অনিশ্চিত  ভবিষ্যত।  নাহ, বাংলাদেশ বা ইজরায়েল, ইরানের যুদ্ধ নয়, এই অন্ধকার নেমেছে সিরিয়ায়। সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে চলে যাচ্ছে দেশের ক্ষমতা। রাজধানী দামাস্কাস দখল করতেই দেশ ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজি আল-জালালিও সুর নরম করে বলেছেন যে সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি।

এক ছিল আফগানিস্তান। চার বছর আগে সেখানেও তালিবান একইভাবে একের পর এক শহর দখল করেছিল। কিন্তু সেই সময় অন্তত প্রতিরোধ করতে লড়াইটুকু করেছিল আফগান সেনা। কিন্তু সিরিয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে প্রতিরোধ দেখা গেলেও, হামা, আলেপ্পার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর হাতছাড়া হতেই কার্যত লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে সিরিয়ার বাহিনী। হায়াত তাহেরি আল-শাম নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, যারা সিরিয়ায় এই অভ্যুত্থান চালাচ্ছে, তারা আজ দামাস্কাসে পৌঁছনোর আগেই রাজ্যপাট ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। সেনাবাহিনীও আগে থেকেই বিমানবন্দর সহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার দখল ছেড়ে দিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী যখন জেল ভাঙছে, সন্ত্রাসীদের বের করে নিয়ে যাচ্ছে, তখনও হাত গুটিয়েই বসে সেনা। তাদের ভূমিকা এখন নীরব দর্শকের।

সিরিয়ার এই অভ্যুত্থান সম্পর্কে বুঝতে গেলে আগে সে দেশের অবস্থান, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং কেন এই ক্ষমতা দখলে উদ্যত হয়ে উঠেছে সশস্ত্র বাহিনী, তা নিয়ে জানা দরকার। প্রথমেই দেখতে হবে সিরিয়ার অবস্থান। ভূমধ্যসাগরের পাশে অবস্থিত সিরিয়া। এক পাশে রয়েছে তুরস্ক, আরেকদিনে রয়েছে ইজরায়েল। জর্ডন, ইরাকও ঘিরে রেখেছে সিরিয়াকে। মধ্য প্রাচ্যে বাণিজ্যপথ ভূমধ্যসাগর। তাই এর পাড়ে অবস্থিত দেশগুলিরও গুরুত্ব স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। তাছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ সিরিয়া। বিভিন্ন দিক থেকেই সমৃদ্ধ তারা। আর এই সম্পদ দখলের জন্য বহু দশক ধরেই লড়াই চলে আসছে। তুরস্ক, সৌদি আরব ও আমেরিকাও কিছুটা কলকাঠি নাড়ছে সিরিয়ার পিছনে। বর্তমানে সিরিয়ার অবস্থা যেন দাবার বোর্ডের মতো। একটা ভুল চাল। তাতেই মৃত্যু রাজার। গেম ফিনিশ।

সিরিয়ার অবস্থান।

সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী-

দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। তাদের মাথাব্যথার কারণ তিনদিকে। আইসিস যেমন রয়েছে, তেমনই কুর্দি বাহিনী রয়েছে। আবার ব্যাঙের ছাতার মতো বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীও রয়েছে, যারা ক্ষণে ক্ষণে বিদ্রোহের ডাক দেয়। এর মধ্যেই অন্যতম হল হায়াত তাহরির আল-শাম ও জইশ আল-ইজ্জা। এরাই বর্তমানে অভ্যুত্থান চালাচ্ছে সিরিয়ায়। তাহরির আল-শাম ২০১২ সালে তৈরি হয়েছিল। সেই সময় নাম ছিল আল-নুসরা। আসাদ বিরোধী সিরিয়া ন্যাশনাল আর্মির সদস্যরাই এতে সামিল হয়। পরের বছরই আল কায়েদাকে সমর্থন জানানোর কথা জানায় আল নুসরা। তবে ২০১৬ সালে আল কায়েদার সঙ্গে সেই জোট ভেঙে বেরিয়ে যায়। তখন নাম হয় হায়াত তাহরির আল-শাম। যদিও আমেরিকা, ব্রিটেন এখনও তাদের আল-কায়েদা মদতপুষ্ট বলেই মনে করে।

২০১৬ সালে সিরিয়ায় ক্ষমতা দখলের জন্য মাথা তোলে তাহরির আল-শাম। দখল করে নেয় ইদলিব। চাপের মুখে পড়েন আসাদ। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরানের মদতপুষ্ট হিজবুল্লা ও ইরানের মিলিশিয়া বাহিনী।সেই সময় থেকে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা এখনও চলছে।

সিরিয়া দাপাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। PTI

 আসাদ রাজত্ব-

সিরিয়ার উত্থান-পতন নিয়ে কথা বলতে গেলে আল আসাদ পরিবারের কথা আসবেই। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছে এই পরিবার। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। বিমানবাহিনীর পাইলট থেকে রাজনীতিতে আসা, ১৯৬৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। সেই সময় তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন।

তবে ক্ষমতার লোভ। নিজের গুরু সালাহ আল-জাদিদকেও সরাতে দু’বার ভাবেননি হাফিজ। প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ২০০০ সালে মৃত্য়ু পর্যন্ত, তিনিই প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসে বাশার আল-আসাদ। তখন বয়স ছিল মাত্র ৩৪। চক্ষুবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার শখ থাকলেও, বাবার চাপে পড়ে সিরিয়ার সামরিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। দাদার অকালমৃত্যুতে ২০০০ সালে বাবার প্রয়াণে প্রেসিডেন্ট গদিতে বসেন বাশার। ২০০৭ সালে ফের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন।

কেন সামরিক অভ্যত্থান সিরিয়ায়?

সিরিয়া বিভিন্ন দিক থেকে সমৃদ্ধ হলেও, সমস্যাও কম নেই। বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক উথাল-পাতাল তো ছিলই। তার উপরে সরকারের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ তৈরি করছিল ক্ষোভ। সেই ধিকিধিকি আগুন থেকেই ২০১১ সালে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। কড়া হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করতে যান বাশার আল-আসাদ। বুমেরাং হয়ে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বাশারের ইস্তফার দাবি করেন জনগণ। সেই যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, তা এখনও রয়েছে। টানা ১৩ বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিলেন। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন ৬০ লক্ষ মানুষ। তারা জর্ডন, লেবাননে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দেশ ছাড়ার সমস্যা বড় মাথাব্যথা সিরিয়ায়।

ধ্বংসস্তূপ সিরিয়া। PTI

এখন হঠাৎ কেন ওলট-পালট হয়ে গেল সিরিয়া?

এতদিন বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক শোনা গেলেও, তা কড়া হাতে দমন করতে পেরেছেন, কারণ পিছনে ছিল রাশিয়া, ইরানের মতো বন্ধু দেশগুলির সমর্থন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ নিয়ে বিধ্বস্ত রাশিয়া ও ইরান -দুইজনই। তারা কার্যত হাত তুলে নিয়েছে। হিজবুল্লা, যাকে এতদিন সমর্থন করেছে আসাদ সরকার, তারাও নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছে বিপদ বুঝেই। অন্যদিকে, মজা লুটছে আমেরিকা। হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, সিরিয়া তাদের বন্ধু নয়। তাই পরিস্থিতি খারাপ দেখেও তাদের কিছু করার নেই।

লাগাতার হামলা চলছে। PTI

কী হচ্ছে এখন?

হামা, আলেপ্পার পর দামাস্কাসও এখন বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে। বিপদ বুঝে দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। হাফিজ আল-আসাদ, যাকে সিরিয়ার রূপকার বলা হত, তার মূর্তি ভেঙে, দড়ি বেঁধে মাটিতে টেনে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে বিদ্রোহীদের। উল্লাসে মেতে তারা। সিরিয়ার অন্ধকার যুগের অবসান হয়েছে বলেই দাবি তাদের।  দেশের নাগরিক আবার দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে ভীত। আরেক পক্ষ বাশারের বিদায়ে আনন্দিত। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তার উত্তর আপাতত কারোর জানা নেই।