কুয়ালালামপুর: জনপ্রিয় সামুদ্রিক মাছটির স্বাদ চেখে দেখতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। পরিচিত দোকানদারও খুব সুস্বাদু বলে পাফার মাছ (Puffer Fish) বিক্রি করেন। কিন্তু, সেই মাছ খেয়ে যে মর্মান্তিক পরিণতি হবে, তা কল্পনাও করেননি মালয়েশিয়ার (Malaysia) ওই দম্পতি। মাছটি রান্না করে খাওয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই মৃত্যু হল বৃদ্ধার। আর তাঁর স্বামী কোমায় চলে গিয়েছেন। মালয়েশিয়ার জোহর শহরের এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই নড়ে-চড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। জনপ্রিয় পাফের মাছ খেয়ে কেন বৃদ্ধ দম্পতির মৃত্যু হল, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনেরও পরামর্শ দিয়েছেন জোহরের স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারম্যান লিং তিয়ান সুন।
ঠিক কী হয়েছিল বৃদ্ধ দম্পতির?
জোহরের ওই বৃদ্ধ দম্পতির মেয়ে আই লি সোশ্যাল মিডিয়ায় পাফের মাছ খেয়ে তাঁর বাবা-মায়ের মর্মান্তিক পরিণতির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত ২৫ মার্চ এক পরিচিত মাছের দোকান থেকেই তাঁর বাবা পাফের মাছ কিনে আনেন বাড়িতে। সুস্বাদু ও জনপ্রিয় খাদ্য হিসাবেই পরিচিত পাফের মাছ। তাঁর মা লিম সিউ গুয়ান মাছটি অন্যান্য মাছের মতোই জল দিয়ে ধুয়ে রান্না করেন এবং দুপুরে স্বামী-স্ত্রী মিলে খান। খেয়ে ওঠার পরই তাঁর মায়ের প্রচণ্ড কাঁপুনি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ঘণ্টা খানেক পর তাঁর বাবারও একই উপসর্গ দেখা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বেগতিক বুঝে বাবা-মা-কে হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁদের ছেলে। কিন্তু, হাসপাতালে ভর্তি করার এক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় ৮৩ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধার। আর আইসিইউ-তে ভর্তি বৃদ্ধ। বর্তমানে তিনি কোমায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আই লি।
বাবারও আরও কোনও খারাপ খবর আসবে বলে প্রহর গুনছেন আই লি ও তাঁর দাদা। তিনি জানান, তাঁর বাবা প্রাণে বাঁচলেও বয়সের কারণে সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন না বলে চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন।
জনপ্রিয় পাফের মাছ খেয়ে মর্মান্তিক পরিণতির কারণ কী?
আই লি জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকেই তাঁর বাবা, মায়ের মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, খাবারে টক্সিন অথবা টেটরোডোটোক্সিন ইনজেশন-এর মতো বিষাক্ত কিছু ছিল, যার জন্য তাঁদের মস্তিষ্কের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার ফলেই কাঁপুনি শুরু হয় এবং শ্বাসযন্ত্রেও প্রভাব পড়ে। পাফের মাছের মধ্যেই বিষাক্ত টক্সিন অথবা টেটরোডোটোক্সিন ইনজেশন থাকে। যা মৃত্যুর অন্যতম কারণ হতে পারে।
যদিও মালয়েশিয়ার মতো অনেক দেশেই অন্যতম জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে পরিচিত পাফের মাছ। এপ্রসঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, মাছের দেহ থেকে বিষাক্ত টক্সিন অথবা টেটরোডোটোক্সিন ইনজেশন বের করার পর সেটি রান্না করলে ক্ষতি হয় না। তবে জল দিয়ে ধুয়ে, এমনকি রান্না করেও বিষাক্ত টক্সিন অথবা টেটরোডোটোক্সিন ইনজেশন বের করা যায় না। কেবল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেফ এই বিষাক্ত টক্সিন মাছের দেহ থেকে বের করতে পারে। তাই খাবার গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।