ব্যাঙ্কক: সম্প্রতি, থাইল্যান্ডের জেলেদের জালে ধরা পড়েছে এক অতি বিরল দৈত্যাকার মাছ। আর তারপরই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে থাইল্যান্ড জুড়ে। না, মাছটির চেহারা তাদের আতঙ্কের কারণ নয়। তাদের ভয়, এই মাছ জালে ধরা পড়েছে মানে, মারাত্মক ভূমিকম্প এবং সুনামি আসছে। ধ্বংসলীলা চলবে থাইল্যান্ডে। গত বুধবার (৩ জানুয়ারি), আন্দামান সাগরে থাই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে মাছটি। মাছটি হল অরফিশ। এই মাছকে বলা হয় ‘হার্বিঙ্গার অব ডুম’, অর্থাৎ, ‘সর্বনাশের অগ্রদূত’। অনেকে একে ‘দ্য আর্থকোয়েক ফিশ’ বা ‘ভূমিকম্প মাছ’-ও বলা হয়। সাধারণত, এই মাছ সমুদ্রের নীচে ১,০০০ মিটার গভীরে পাওয়া যায়। ভূপৃষ্ঠে এই মাছ খুব কমই দেখা যায়। জাপানি লোককথা অনুসারে, অগভীর জলে অরফিশের দর্শন পাওয়া, আসন্ন ভূমিকম্প বা সুনামির ইঙ্গিত।
নতুন বছরের প্রথম দিনই জাপানে এক মারাত্মক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। একদিনে ১৫৫ বারের বেশি কেঁপে উঠেছে জাপান। ১ মিটার উচ্চতার সুনামি তরঙ্গও আছড়ে পড়েছিল মধ্য জাপানে। এর মাত্র দুদিন পরই ওরফিশটি ধরা পড়ে। অদ্ভুত চেহারার এই সামুদ্রিক প্রাণীটি ১১ মিটার লম্বা। এর জেরে, থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের সাতুন প্রদেশের লা-নগু এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সাতুনের আশেপাশে অরফিশ দেখা পাওয়া, আন্দামান উপকূলে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ইঙ্গিত। সুনামিও আসতে পারে। কাসেটসার্ট ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক বাস্তুবিদ্যা বিষয়ের অধ্যাপক থন থামরোংনাওয়াসাওয়াত জানিয়েছেন, অরফিশ গভীর সমুদ্রের মাছ। অতীতে দেখা গিয়েছে, এই মাছকে যখনই সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি উঠে আসে, তার পরপরই ভূমিকম্প হয়।
তবে, তাঁর মতে, অগভীর জলে অরফিশ দেখা গেলেই যে ভূমিকম্প হবে, তা নয়। আসলে অনেক কারণেই গভীর জল থেকে, অগভীর জলে উঠে আসতে পারে এই মাছ। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি, ভারত মহাসাগর থেকে আন্দামান সাগরে ঠান্ডা জল ঢুকেছে। এই কারণেও অরফিশ অগভীর জলে উঠে আসতে পারে। আন্দামান সাগরে ঠাণ্ডা জল প্রবেশ করায় পর, ইদানিং অনেক গভীর জলের মাছকেই অগভীর জলে উঠে আসতে দেখা গিয়েছে। এর আগে, আরও এক গভীর জলের মাছ, ‘মোলা মোলা’-ও জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। এখন একটি অরফিশ ধরা পড়েছে। থন থামরোংনাওয়াসাওয়াত বলেছেন, “আমার মনে হয় এই মাছগুলি ঠান্ডা জলের ভরকে অনুসরণ করেই আন্দামান সাগরের অগভীর জলে উঠে এসেছে। সমুদ্রে এই ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলেও, তার প্রেক্ষাপট বোঝাটা দরকার। তাহলে মানুষ অযথা আতঙ্কিত হবে না।”