গাজা: ট্রাম্পের হুমকিতেই হল কাজ। অবশেষে ইতি যুদ্ধে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ থামাতে রাজি হল ইজরায়েল ও হামাস। যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে দুই পক্ষই। হামাসের হাতে দীর্ঘ সময় ধরে যারা বন্দি রয়েছেন, তারা অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছেন। তবে এতেও শর্ত আছে। পাল্টা ইজরায়েলকে মুক্তি দিতে হবে জেলবন্দি প্যালেস্তাইনিদের। এদিকে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হতেই যাবতীয় কৃতিত্ব নিয়েছেন হবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইজরায়েলি সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালিয়েছিল হামাস। আকাশ, স্থলপথে একযোগে আক্কমণ করেছিল। ১২০০ সাধারণ মানুষ ও সেনাকে হত্যা করে। অপহরণ করেছিল ২৫০ জনকে। পাল্টা জবাব দিত দেরি করেনি ইজরায়েলও। হামাসের ঘাঁটি গাজায় মুহূর্মুহূ হামলা চালিয়ে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। গাজায় বাড়িঘর তো দূর, হাসপাতাল, স্কুল বলেও আর কিছু নেই। ইজরায়েলের আক্রমণে এখনও পর্যন্ত ৪৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
দীর্ঘ এই ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের আঁচ ক্রমশ গোটা মধ্য প্রাচ্য জুড়েই ছড়িয়ে পড়ছিল। প্যালেস্তাইনের গণ্ডি পেরিয়ে ইজরায়েল লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া, এমনকী ইরানের উপরেও হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে এই দেশগুলিও। যুদ্ধের মাঝেই ইজরায়েল সফলভাবে হামাস ও হিজবুল্লা প্রধানদের নিকেশ করেছে।
এদিকে, ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধবিরতির কথা বলেছে। আগেও এই নিয়ে আলোচনা হলেও, তা বারে বারে ব্যর্থ হয়েছে মূলত ইজরায়েলের আগ্রাসনে। তবে এবার ট্রাম্প হামাসকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে যুদ্ধ না থামালে এবং বন্দিদের মুক্তি না দিলে, ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে। এরপরই এই ঘোষণা।
চুক্তির খুঁটিনাটি এখনও প্রকাশ না হলেও, জানা গিয়েছে, যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি দুই পক্ষই বন্দিদের মুক্তি দেবে। একদিকে হামাস যেমন ৩৩ জন পণবন্দিদের মুক্তি দেবে, তেমনই ইজরায়েলও তাদের জেলে বন্দি থাকা প্যালেস্তাইনিদের মুক্তি দেবে। এই যুদ্ধের জেরে বিশ্বজুড়েই ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও আনা হয়েছে। যুদ্ধ সরাসরি থামানোর কথা তিনি না বললেও, আমেরিকার প্রস্তাবে নিমরাজি হয়েছেন।
আসলে যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর মূল বাধা তাঁর জোটের তিন শরিক। তিন কট্টরপন্থী দলই জানিয়েছে, সংঘর্ষবিরতি মানবে না। হামাসকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার সুযোগ এসেছে। তা কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে সমর্থন তুলে নেওয়া হবে। সরকার পড়ে যাবে। সংখ্যালঘু সরকারের চুক্তি করার কোনও এক্তিয়ারই নেই।
এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু বলছেন, “তিনটে দলকেই বুঝিয়ে রাজি করাবেন। যতদিন সেটা না হচ্ছে, ততদিন গাজায় বড় কোনও অভিযান হবে না।”