লন্ডন: গর্ভবতী মা ফুলকপি-বাঁধাকপি খেলেই গর্ভে অবস্থিত ভ্রূণ মুখ বেঁকাচ্ছে। কিন্তু, মা গাজর খেলেই হেসে উঠছে। ইংল্যান্ডে প্রায় ১০০ জন গর্ভবতী মহিলা এবং তাদের ভ্রূণের উপর করা এক নতুন গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর বিষয় উঠে এসেছে। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায়, বিভিন্ন ধরণের খাদ্যের স্বাদে কীভাবে মানব ভ্রূণ সাড়া দেয়, সেই সম্পর্কে এই গবেষণা আলোকপাত করেছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী মহিলাদের পঁয়ত্রিশ জনকে একটি মাঝারি আকারের গাজরের সমতুল্য খাবারের গুঁড়োর ক্যাপসুল দেওয়া হয়েছিল এবং আরও ৩৪ জন মহিলাকে দেওয়া হয়েছিল ১০০ গ্রাম ফুলকপি-বাঁধাকপির সমপরিমাণ খাবারের গুঁড়োর ক্যাপসুল। বাকি ৩০ জন মহিলা এই দুটির কোনওটিই খাননি। কুড়ি মিনিট পরে, আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানে দেখা গিয়েছে, কপির গন্ধের সংস্পর্শে আসা বেশিরভাগ ভ্রূণই মুখ বেঁকিয়েছে। কিন্তু গাজরের গন্ধ পাওয়া বেশিরভাগ ভ্রূণই হেসে উঠেছে।
এর আগে গর্ভের বাইরে শিশুদের উপর বিভিন্ন খাদ্যের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করা হলেও এই প্রথম ৩২ থেকে ৩৬ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় থাকা মহিলাদের গর্ভে ভ্রূণগুলির ক্ষেত্রে বিবিন্ন খাদ্যের গন্ধের প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করা হল। আল্ট্রাসাউন্ড ছবিগুলি থেকে দেখা গিয়েছে তারাও প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কিন্তু, ভ্রূণগুলি একইভাবে ভাল লাগা বা অপছন্দ অনুভব করে কি না তা জানা যায়নি। গবেষকরা জানিয়েছেন, আল্ট্রাসাউন্ড ছবিগুলি শুধুমাত্র বিভিন্ন স্বাদের প্রতিক্রিয়ায় পেশীর নড়াচড়া হতে পারে। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, ভ্রূণ অবস্থায় মুখের অভিব্যক্তি তৈরি করা কোনও নতুন বিষয় নয়। ২৪ থেকে ৩৬ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মুখে বিভিন্ন জটিল অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়।
এই গবেষণায় জুস বা কাঁচা শাকসবজির বদলে কপি এবং গাজরের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী সমপরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করেছে তা নিশ্চিত করতে হত। এর জন্য গবেষণার দিন তাঁদের গাজর বা বাঁধাকপি না খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া, গবেষকরা মনে করেছিলেন, মায়ের স্বাদের পছন্দ-অপছন্দ, ভ্রূণের প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। আর, ক্যাপসুল আকারে খাদ্যগুলি শরীরে গেলে, তাদের গন্ধে শরীরের অন্যান্য গন্ধ খুব বেশি মিশতে পারে না।
গবেষকদের দাবি, গর্ভে থাকাকালীন পাওয়া স্বাদ শিশুর পরবর্তী জীবনের খাদ্যের অভ্যাসকে প্রভাবিত করে, তা বোঝার জন্য তাঁদের এই গবেষণা অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাঁরা মনে করছেন, যদি কেউ ভ্রূণ অবস্থায় বারংবার বাঁধাকপির স্বাদ পায়, তবে জন্মের পর সে ওই স্বাদটি উপভোগ করতে পারে। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, জীবনের প্রথম কয়েক মাসে কেউ যে ধরনের খাবারের সংস্পর্শে আসে, তা পরবর্তীকালে তাদের খাদ্যাভ্যাস তৈরি করে দেয়। গর্ভবতী মায়েরা স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করলে, তাঁদের সন্তানরাও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পছন্দ করে।