ফ্রান্স: আসছে ১৪ জুলাই, ফ্রান্সের ইতিহাসে অত্যন্ত বড় দিন। ফরাসী বিপ্লবের সময় এই দিনেই পতন ঘটেছিল বাস্তিল দুর্গের, যা ফরাসী বিপ্লবের অন্যতম মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়। বার্ষিক বাস্তিল দিবস উদযাপনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আতশবাজির প্রদর্শনী। প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, আতশবাজি পুড়িয়ে উদযাপনে সামিল হয়। কিন্তু, চলতি বছরের বাস্তিল দিবসে আতশবাজি নিষিদ্ধ করল ফরাসি সরকার। রবিবার (৯ জুলাই) এই বিষয়ে এক সরকারি ডিক্রি জারি করা হয়েছে। সেই ডিক্রি অনুযায়ী, ১৪ ও ১৫ জুলাই আতশবাজি বিক্রি, সঙ্গে রাখা এবং সঙ্গে নিয়ে ঘোরা এবং ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ট্রাফিক স্টপে এক পুলিশ অফিসারের গুলিতে ১৭ বছরের এক কিশোরের হত্যাকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে ছয় রাত ধরে নজিরবিহীন দাঙ্গা ও অশান্তির সাক্ষী হয়েছে ফ্রান্স। তারপরই, এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল।
ফরাসি সরকার জানিয়েছে, ১৪ জুলাইয়ের উৎসবের দিনে আতশবাজি আইন-শৃঙ্খলার গুরুতর বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সম্ভাবনা দূর করার জন্যই, ‘পাইরোটেকনিক্যাল’ সমস্ত সামগ্রী বিক্রি, সঙ্গে রাখা, সঙ্গে নিয়ে ঘোরা এবং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হল। ১৫ জুলাইও এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে, এই নিষেধাজ্ঞার আওতা থেকে প্রশাসনিক সংস্থা এবং পৌরসভাগুলিকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা আগের মতোই বাস্তিল দিবস উদযাপনের জন্য আতশবাজির ঐতিহ্য বহন করতে পারবে। এই ধরনের একটি পদক্ষেপ যে করা হতে পারে, তার ইঙ্গিত অবশ্য একদিন আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এক ফরাসি দৈনিক পত্রিকায় সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন জানিয়েছিলেন, আসন্ন জাতীয় ছুটির সময় ফরাসিদের সুরক্ষার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা নেবে সরকার। ১৩ এবং ১৪ জুলাইকে ‘সংবেদনশীল দিন’ বলে ঘোষণা করেছেন তিনি।
এক সপ্তাহ আগেই, আফ্রিকার বংশোদ্ভূত নাহেল এম নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছিল ফরাসি পুলিশ। সেই ঘটনার জেরে তারপরের ছয় রাত ধরে ব্যাপক অস্থিরতা চলেছে প্রায় সম্পূর্ণ ফ্রান্স জুড়ে। ফরাসি পুলিশ বর্ণ বৈষম্যের দোষে দুষ্ট বলে অভিযোগ করেছিল প্রতিবাদীরা। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পদ্ধতিগতভাবে বর্ণ বৈষম্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই সময় ফরাসি পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতা অস্ত্র হিসেবে ব্যাপকভাবে আতশবাজি ব্যবহার করেছে। হাজার হাজার গাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। হামলা চলেছে স্কুল, টাউন হল, পুলিশ স্টেশন, ব্যাঙ্ক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে। ছয় দিনের অস্থিরতায় ৩,৭০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১,১৬০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্যারিসের পাশাপাশি ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে লিল, মার্সেই, ন্যান্টেস, স্ট্রাসবার্গের মতো অন্যান্য ফরাসি শহরেও।
এখনকার মতো সেই বিক্ষোভ সামাল দিতে পেরেছে ফরাসি সরকার। তবে, বাস্তিল দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি। এমনটাই আশঙ্কা করছে ফরাসি সরকার। তাই আগে ভাগেই আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হল। এরপরও, বাস্তিল দিবস উদযাপন কতটা শান্তিপূর্ণ থাকে, সেটাই দেখার।