সিঙ্গাপুর: ফের চোখ রাঙাতে শুরু করেছে করোনাভাইরাস (Coronavirus)। কেবল ভারত নয়, সমগ্র এশিয়ায় কোভিড-১৯-এর নতুন ঢেউ (Covid Wave) আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ভারত সহ এশিয়ার (Asia) কয়েকটি দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণের রিপোর্ট এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রায় দু-বছর পর ফের ভারত (India), সিঙ্গাপুর (Singapore), ইন্দোনেশিয়া (Indonesia) সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে করোনার এই নতুন ঢেউ স্বাস্থ্য পরিষেবার (Healh Facilities) উপর নতুন করে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই ভারত সহ সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চের শেষ সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারতেও গত অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের পর ফের দৈনিক সংক্রমণের হার অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার প্রায় চারমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় এবং ভিয়েতনামও করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের মিশ্র প্রজাতি XBB ভ্যারিয়ান্ট ভারত সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য প্রজাতি ওমিক্রন-এর মিশ্র সাব ভ্যারিয়ান্ট হল XBB। বর্তমানে এই প্রজাতিই ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। যদিও এখনও পর্যন্ত XBB-র ভয়াবহতা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। এর জন্য ভ্যাকসিনেশন এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধিই মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ভারত সহ এশিয়ার যে সমস্ত দেশে ফের করোনার নতুন ঢেউ আসতে শুরু করেছে, সেই সমস্ত দেশের মোট জনসংখ্যার অধিকাংশেরই কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়া রয়েছে। এছাড়া অধিকাংশই আগে সংক্রমিত হয়েছেন। ফলে তাঁদের দেহে করোনা প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। তবে সময়ে-সময়ে করোনার নতুন ঢেউ আসবে এবং করোনার সঙ্গে চলতে কোভিডবিধি মেনে চলারই পরামর্শ দিচ্ছে সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতও করোনা মহামারীর ভয়াবহতার সাক্ষ্য হয়েছিল। দৈনিক সংক্রমণের হার যেমন মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছিল, তেমনই বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হাসপাতালগুলিতে বেড, অক্সিজেনেক সংকুলান প্রকট হয়ে উঠেছিল। তারপর বৃহস্পতিবার ফের দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ১০ হাজার ১৫০ ছাড়াল। যদিও এবার এখনও পর্যন্ত হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগীর ভর্তির হার খুবই কম। তবু পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম সতর্কতা নিতে শুরু করেছে কেন্দ্র। চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রের তরফে দেশজুড়ে কোভিড হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার বন্দোবস্ত খতিয়ে দেখতে মহড়া শুরু হয়েছে। অনেক রাজ্যে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সবমিলিয়ে, পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না যায় সে ব্যাপারে তৎপর কেন্দ্র।
ভারতের মতো সিঙ্গাপুরেও দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার ১০ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই সিঙ্গাপুরে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তারপর মার্চের শেষে সাপ্তাহিক করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ ২৮ হাজার পর্যন্ত ওঠে। তবে চলতি সপ্তাহের গোড়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৭। মাস্ক বাধ্যতামূলক করার পরই সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে।
আবার ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের মতোই চলতি মাসে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। গত বুধবার ইন্দোনেশিয়ায় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৯৮৭। এরপর বৃহস্পতিবারই করোনার নতুন ঢেউ আসতে শুরু করেছে বলে দেশবাসীকে সতর্কবার্তা দেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। করোনার এই ঢেউ মোকাবিলায় দেশবাসীকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ নেওয়ারও আবেদন জানান তিনি। তবে পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট উইডোডো।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ ভিয়েতনামে গত সাতদিনে দৈনিক সংক্রমণ সর্বোচ্চ ৬৩৯-এ পৌঁছেছে, যা গত এক সপ্তাহের মধ্যে চারগুণ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভিয়েতনামের স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্কুল, কলেজ এবং সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে করোনা-নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণ যাতে না হয়, সেজন্য করোনা আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করা এবং আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে এর মধ্যে ফিলিপিন্সে ফেব্রুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কেবল মার্চে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।