ইসলামাবাদ: পাকিস্তানে চলছে নির্বাচন। ৮ ফেব্রুয়ারি হয়েছে ভোটগ্রহণ। আজ, ৯ ফেব্রুয়ারি ফল প্রকাশ হবে। ইতিমধ্যেই চলছে ভোটগণনা। বর্তমানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খানের মধ্যে। তবে প্রচারের আলো কেড়েছেন আরও একজন। তিনি হলেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (Bilawal Bhutto Zardari)। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান তিনি। দেশের বিদেশমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের এই নেতার সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে ভারতের এক রাজনৈতিক নেতার। তিনি হলেন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। এক কথায় বলতে গেলে পাকিস্তানের ‘রাহুল’ তিনি। কেন এমন বলা হচ্ছে জানেন?
না, শুধু সুপুরুষ চেহারাতেই মিল নয়, বিলাওয়াল ভুট্টো ও রাহুল গান্ধীর পড়াশোনা থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ, কেরিয়ারের উত্থান-পতন, সবকিছুতেই মিল আছে। দুইজনই পরিবারতন্ত্রের ফসল। ভারতে রাহুল গান্ধীকে পরিবারতন্ত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপি খোঁচা দিলেও, বিশেষ জবাব দেন না তিনি। পাকিস্তানে একই আক্রমণের শিকার বিলাওয়াল। তবে তিনি চুপ করে থাকার পাত্র নন। বিরোধীদের চাঁচাছোলা জবাব দিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল বলেছিলেন, “এই জীবন (রাজনীতি) আমি বেছে নিইনি, এই জীবনই আমায় বেছে নিয়েছে।”
রাহুল গান্ধী ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির মধ্যে কতটা বা কেমন মিল রয়েছে, দেখে নেওয়া যাক-
রাহুল গান্ধীর ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাবা রাজীব গান্ধীও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মা সনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ফলে ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক আবহে বড় হয়ে উঠেছেন রাহুল গান্ধী।
একই চিত্র বিলাওয়ালের পরিবারেও। বিলাওয়ালের মা বেনজির ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাবা আসিফ আলি জারদারি ছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। সেই সূত্রেই রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় বিলাওয়ালের।
ছোটবেলায় রাহুল গান্ধীকে প্রচারের আলো থেকে দূরে রাখতেই দেহরাদুনের দুন স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। নিরাপত্তার কারণে স্কুল ছাড়িয়ে বাড়িতেই শিক্ষা দেওয়া হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য রাহুল গান্ধী বিদেশে যান। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। পরে এমফিল করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লন্ডনের মনিটর গ্রুপে চাকরিও করেন রাহুল গান্ধী।
বিলাওয়ালের পড়াশোনা করাচি থেকে। ১৯৯৯ সালে মায়ের সঙ্গে দুবাই চলে যান তিনি। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক হন।
২০০৭ সালে খুন হন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। সেই সময় বিদেশে পড়াশোনা করছিলেন বিলাওয়াল। মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেই বোনকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। মায়ের মৃত্যুর পরই রাজনীতিতে পা রাখেন বিলাওয়াল। ওই বছরই পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান হন তিনি। বিলাওয়াল বলেছিলেন, মায়ের অপূর্ণ কাজ করতেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন।
বিলাওয়ালের মতোই ভাগ্য রাহুল গান্ধীরও। রাজনীতির আলোয় এসেছিলেন রাজীব গান্ধীর হত্যার পরই। ১৯৯১ সালে এলটিটিই জঙ্গিরা রাজীব গান্ধীর হত্যা পরিকল্পনা করে। মালার ভিতরেই ছিল টাইমবম্ব। বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় রাজীব গান্ধীর দেহ। খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর মাথা। সেই সময় ২০ বছর বয়স ছিল রাহুল গান্ধীর। বাবার মৃত্যুর পরই রাজনীতিতে আসেন রাহুল।
২০০৪ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন রাহুল গান্ধী। বাবার আসন, আমেঠী থেকে লড়েন তিনি। পরে ২০০৯, ২০১৪ সালেও আমেঠী থেকেই লড়ে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন রাহুল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে আমেঠী ও ওয়েনাড-দুই আসন থেকে প্রার্থী হন রাহুল। আমেঠী থেকে হেরে গেলেও, জয়ী হন কেরলের ওয়েনাড থেকে।
একইভাবে বিলাওয়ালও একাধিক আসন থেকে লড়েন। একসঙ্গে করাচি দক্ষিণ, মালাকান্দ ও লারখানা থেকে নির্বাচনে লড়েন বিলাওয়াল। কিন্তু জেতেন একমাত্র লারখানা আসন থেকে।
বিলাওয়াল পাকিস্তানের মন্ত্রী হলেও, রাহুল গান্ধী ভারতের মন্ত্রী হতে পারেননি। সাংসদ হিসাবে একাধিকবার নির্বাচিত হলেও এবং কংগ্রেসের দায়িত্ব পেলেও নির্বাচনে হারের পরই হঠাৎ দায়িত্ব ছেড়ে দেন রাহুল। ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন রাজনীতির আঙিনা থেকেও। আবার কয়েকমাস বাদেই ফিরে আসেন রাজনীতিতে। রাহুলের এই আচরণ নিয়ে কম মজা-কটাক্ষও হয়নি। রাহুলের মতো খামখেয়ালি না হলেও, পাক রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য় মুখ হিসাবে সেভাবে কখনওই উঠে আসতে পারেননি বিলাওয়াল।