বেজিং: কলেজে লম্বা ছুটি। নেই কোনও প্রজেক্ট বা হোমওয়ার্কও। এই ছুটিতে কাজ একটাই। চুটিয়ে প্রেম করো। অবাক হচ্ছেন? এটাই কিন্তু সত্যি। চিনের বিভিন্ন কলেজেই দেওয়া হয়েছিল এই ছুটি। এপ্রিলের গোড়ায় এক সপ্তাহের জন্য এই ছুটির নাম স্প্রিং ব্রেক। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, এই এক সপ্তাহ পড়ুয়ারা চুটিয়ে প্রেম করুক। কিন্তু ভবিষ্যৎ গড়ার সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পড়ুয়াদের প্রেম বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কেন এত চিন্তিত? এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে জটিল অঙ্ক। দেশকে বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জিনপিং সরকার। কারণটা কী জানেন?
হু হু করে জন্মহার কমছে চিনে। বেজায় চিন্তিত সরকার। নতুন প্রজন্মই যদি তৈরি না হয়, তাহলে তো দেশের অস্তিত্বি থাকবে না! এই চরম সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতেই সাহায্যে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের কথায়, ছুটি পেয়ে পড়ুয়ারা যদি প্রেম করার ফুরসত পান, তবে ভবিষ্যতে বিয়ে, পরিবার পরিকল্পনার কথাও ভাববে। তাহলে দেশের লাভ হয় আর কী।
শুধু প্রেমেই নয়, চিনের গোড়া কমিউনিস্ট সরকার অবিবাহিত মহিলাদেরও আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণে ছাড়পত্র দিয়েছে। বিবাহিত মহিলাদের মতোই তাঁরাও কাজের জায়গায় মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। এক সময়ে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এক সন্তান নীতি এনেছিল সরকার। সেই নীতি ব্যুমেরাং হয়ে যাওয়ায় এখন তিন সন্তান নীতি শুরু করেছে চিন। কিন্তু তাতেও জনসংখ্যা কমে যাওয়ার সমস্যা মিটছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, বিগত ৬ দশকের মধ্যে বর্তমানে চিনে জন্মহার সবচেয়ে কম। জনসংখ্যা বাড়ার বদলে তা দ্রুত কমতে শুরু করে দিয়েছে। শুধু ২০২২ সালেই চিনে জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ৯ লক্ষ। এর প্রধান কারণ হল, বিয়ে বা সন্তানধারণ করতে চাইছে না যুব প্রজন্মের একটা বড় অংশ। ২০২১ সালের তুলনায় চিনে ২০২২ সালে বিয়ের সংখ্যা ১১ শতাংশ কমে গিয়েছে। প্রথমবার বিয়ের সংখ্যাও কমেছে এক ধাক্কায় প্রায় ৪০ শতাংশ। বাড়ছে বিয়ের বয়সও। আগে বিয়ের গড় বয়স ২৪ বছর হলেও, এখন তা বেড়ে ২৯ হয়ে গিয়েছে।
করোনা মহামারির সময় সবথেকে বেশি সময় ধরে একটানা লকডাউন চলেছে সংক্রমণের উৎসস্থল চিনেই। লকডাউনে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। হাতে টাকা না থাকলে সংসার পাতবেন কী করে? চিনে বিয়েতে অনীহার অন্যতম কারণ মনে করা হচ্ছে আর্থিক সমস্যাকেই। এছাড়া, গ্রামীণ এলাকায় পণপ্রথা ও গার্হস্থ্য হিংসার কারণেও কমছে বিয়ে।
জন্মহার ক্রমশ কমতে থাকায় চিনে বার্ধক্য বাড়ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমায় ধাক্কা খাচ্ছে চিনের অর্থনীতি। সরকারের প্রতি চিনের তরুণ-তরুণীদের ক্ষোভ এতটাই যে তাঁরা বলছেন, তাঁরাই দেশের শেষ প্রজন্ম। আর কোনও নতুন প্রজন্মকে তাঁরা জন্ম দিতে চান না।
অন্যদিকে, চিনের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে যে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সেটাও কমিউনিস্ট সরকারের দমন নীতির কারণেই হচ্ছে। সবমিলিয়ে হু হু করে কমছে জনসংখ্যা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কম বয়সে বিয়ে করলে সরকারি পুরস্কারের ব্যবস্থাও হয়েছে।
চিনে বিয়ের জন্য ছেলেদের বয়সের সীমা ২২ বছর, মেয়েদের ২০ বছর। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ২৫ বছরের কম বয়সে কোনও মহিলা বিয়ে করলে ভারতীয় মুদ্রায় সরকার তাঁকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা দেবে। এছাড়া, সন্তান জন্মের পর আর্থিক সাহায্য, শিশুদের চিকিত্সা ও পড়াশোনার খরচেও ছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ডিভোর্সের নিয়ম কঠিন করেছে কমিউনিস্ট সরকার। বলা হয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদে ইচ্ছুক দম্পতিদের বাধ্যতামূলকভাবে ১ মাস একসঙ্গে থাকতে হবে।
শুধু চিন নয়, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ এশিয়ার একাধিক দেশেই এই হাল। দেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই এখন সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।