প্যারিস: মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি), ৩৪ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল অ্যাটালকে ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করলেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। এতদিন, ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রীর পদে ছিলেন গ্যাব্রিয়েল অ্যাটাল। সোমবারই ইস্তফা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন। গ্যাব্রিয়েল অ্যাটালকে নিয়োগের মাধ্যমে তাঁর জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন ম্যাক্রঁ, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বস্তুত, গত বছর পেনশন এবং অভিবাসনের সংস্কারের পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা হুহু করে কমেছে। জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অতি ডানপন্থী নেতা মেরিন লে পেনের দলের থেকে প্রায় আট থেকে দশ শতাংশ পিছনে রয়েছে ম্যাক্রঁ শিবির। এই অবস্থায় অ্যাটালের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চাইছেন ম্যাক্রঁ।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্যাব্রিয়েল অ্যাটালই সর্বকনিষ্ঠ। এছাড়া, তিনিই প্রথম ফরাসী প্রধানমন্ত্রী, যিনি নিজেকে খোলাখুলি সমকামী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ২০১৭ সালে ম্যাক্রঁ যে রকম ফরাসী জনগণের নয়নের মণি ছিলেন, বর্তমানে গ্যাব্রিয়েল অ্যাটালও ভোটারদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০১৭-য় সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ম্যাক্রঁ। বস্তুত, অ্যাটল এবং ম্যাক্রঁর সম্মিলিত বয়স, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের থেকেও কম। ২০২২ সালে পুনঃনির্বাচিত হলেও, তার পরপরই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান ম্যাক্রঁ। এই অবস্থায় অ্যাটালই তাঁর ভরসা। ম্যাক্রঁ-অ্যাটাল জুটি ফরাসী সরকারকে এক নতুন জীবন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোভিড মহামারির সময়ই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন গ্যাব্রিয়েল অ্যাটাল। ফরাসী সরকারের মুখপাত্র হিসাবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ফ্রান্সের ঘরে ঘরে। সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষায় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে উঠে এসেছিল তাঁর নাম। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি ক্লাসরুমে আবায়ার মতো লম্বা পোশাক পরা নিষিদ্ধ করেছিলেন। অ্যাটাল বলেছিলেন, প্রধানত মুসলমানরা এই পোশাক পরেন। কিন্তু, এই পোশাকগুলি স্কুলে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। স্কুলে কারও পোশাক যাতে আলাদা করে মনোযোগ আকর্ষণ না করে, এবং তার জন্য যাতে কাউকে স্কুলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মস্করার মুখে পড়তে না হয়, তার জন্য কিছু পাবলিক স্কুলে ইউনিফর্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরিকল্পনাও করেন অ্যাটাল।
তবে, নেতা বদলে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ বদল ঘটবে না বলেই মনে করছে বিরোধীরা। ফরাসী বিরোধী নেতারা জানিয়েছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীর থেকে তাঁদের খুব বেশি কিছু আশা নেই। কারণ সরকারি সিদ্ধান্তের বেশিরভাগই ম্যাক্রঁ নিজেই নিয়ে থাকেন। ফরাসি সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা অলিভিয়ের ফউর বলেছেন, “এলিজাবেথ বোর্ন হোক, গ্যাব্রিয়েল অ্যাটাল হোক বা অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হোক। তা নিয়ে আমরা ভাবিত নয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী যেই হোন, সরকারের নীতি একই থাকবে।”