ওয়াশিংটন: ফের আমেরিকার ফ্লোরিডায় দেখা মিলল দৈত্যাকার শামুকের। যার জেরে আবারও মেনিনজাইটিস সংক্রমণের হুমকির মুখে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার বাসিন্দারা। জুন মাসের শেষদিকে, ‘ফ্লোরিডা ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড কনজিউমার সার্ভিসেস’ বা ‘এফডিএসিএস’, ফ্লোরিডার পাস্কো কাউন্টির নিউ পোর্ট রিচি এলাকায় এই দৈত্যাকার আফ্রিকান স্থল শামুকের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এই শামুক অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং এটি ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর শামুকগুলির অন্যতম বলে জানিয়েছে তারা। বিভিন্ন উদ্ভিদের পাশাপাশি, মানুষেরও ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে এই শামুক। এই শামুক-হুমকির মোকাবেলায় পাস্কো কাউন্টির একটা বড় এলাকা জুড়ে কোয়ারেন্টাইন জোন চিহ্নিত করে, ওই এলাকায় শামুক নির্মূল কর্মসূচি শুরু করেছে।
দৈত্যাকার আফ্রিকান স্থল শামুকগুলি, কৃষিকাজ এবং প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক বলে জানিয়েছে ‘এফডিএসিএস’। তাদের ওয়েবসাইটে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই শামুকগুলি ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। অন্তত ৫০০টিরও বেশি জাতের গাছপালা তাদের খাদ্য। শুধু গাছপালাই নয়, এই দৈত্যাকার শামুকের কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। আসলে, এই শামুকগুলি ‘ব়্যাট লাংওয়ার্ম’ নামে এক ধরনের পরজীবী বহন করে। এই পরজীবী মেনিনজাইটিস রোগ সৃষ্টি করে। মেনিনজাইটিস হলে মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডের রক্ষাকারী আবরণ বা ঝিল্লি ফুলে যায়। এতে, মানব শরীরের ওই দুই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলির মতে, ব়্যাট লাংওয়ার্ম সংক্রমণ থেকে বেশিরভাগ মানুষই কোনওরকম চিকিত্সা সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণরূপে রোগমুক্ত হতে পারেন। তবে, এই সংক্রমণ থেকে একটি বিরল ধরণের মেনিনজাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রোগের কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট চিকিত্সা নেই। এই রোগ থেকে পক্ষাঘাত, কোমায় চলে যাওয়ার মতো গুরুতর জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
Salad ? vs Giant African Land Snail. pic.twitter.com/tW9YvuNeil
— Esio & friends (@MD_Esio) June 3, 2020
জীববিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মেনিনজাইটিস সৃষ্টিকারী পরজীবী সাধারণত ইতর প্রাণীদেরই সংক্রামিত করে থাকে। তবে, সেই সংক্রামিত প্রাণী বা অন্যান্য দূষিত খাবার খেলে মানুষও সংক্রামিত হতে পারে। দৈত্যাকার আফ্রিকান স্থল শামুকের ক্ষেত্রে আরও সমস্যা হল, এরা মাত্র ৪ মাস বয়স থেকেই পরবর্তী প্রজন্মের জন্ম দিতে শুরু করে। যে কয়েক বছর তারা জীবিত থাকে, সেই সময় হাজার হাজার ডিম পারে। এর পাশাপাশি কোনও যানবাহনকে আঁকড়ে ধরে এরা দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে পারে। ফলে, সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গ বহন করে মেনিনজাইটিসের পরজীবী। প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার এক আশ্চর্য উপায় রয়েছে আফ্রিকান দৈত্যাকার স্থল শামুকের। বিরুদ্ধ পরিবেশে তারা মাটির অনেক গভীরে চলে যায়। ওই অবস্থায় তারা অন্তত এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েথে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। কাঁচা বা কম রান্না করা শামুক, মিষ্টি জলের চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, ও সম্ভাব্য দূষিত শাকসবজি বা উদ্ভিজ্জ রস না খেতে বলা হয়েছে। বাড়িতে বা বাগান থেকে অবিলম্বে সমস্ত শামুক এবং ইঁদুর দূর করতে হবে। কাঁচা শামুক ধরার পর হাত ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। কাঁচা খেতে হয়, এমন শাকসবজি খুব ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি, দৈত্যাকার শামুক নির্মূল কর্মসূচীতে, কোয়ারেন্টাইন জোনের ভিতর মেটালডিহাইড-ভিত্তিক মোলুসিসাইড বা শামুক টোপ ব্যবহার করা হবে। দৈত্যাকার শামুক দেখলে, বাসিন্দাদেরও কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
What time is the shindig? I’ll bring African Giant Snails, can grill ’em with butter and garlic pic.twitter.com/4VAca8Vevn
— Ireneish (@Ireneish12) July 1, 2022
প্রসঙ্গত, দৈত্যাকার আফ্রিকান স্থল শামুক থেকে মেনিনজাইটিস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব, আমেরিকায় নতুন নয়। গত শতকের সাতের দশক থেকেই মার্কিন মুলুকে এই শামুক নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে। ১৯৬৯ সালে ফ্লোরিডাতেই প্রথম এই শামুক থেকে মেনিনজাইটিস প্রাদুর্ভাব ঘটার বিষয়টি শনাক্ত করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে ওই শামুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্মূল করা হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে, ২০১১ সালে ফের মায়ামি-ডেড কাউন্টিতে এই প্রজাতিটির শামুক মিলেছিল। তারপরও দৈত্যাকার শামুককে সফলভাবে নির্মূল করার ঘোষণা করেছিল ‘এফডিএসিএস’। মার্কিন মুলুকে বিশেষ অনুমতি ছাড়া এই শামুক আমদানী করাও নিষিদ্ধ। তারপরও, কোথা থেকে ফের দৈত্যাকার শামুকগুলি ফ্লোরিডায় হানা দিল, তা এখনও রহস্য।