ওট্টাওয়া: দুয়ারে হিমশৈল! এছাড়া আর কী বলা যায়? কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের উপকূলে ভেসে এসেছে এক বিশালাকার হিমশৈল। হিমশৈলটির আকার দেখে নেটিজেনরা বিস্মিত হলেও, স্থানীয় বাসিন্দারা বড় মাপের তুষার খণ্ড দেখতে অভ্যস্ত। এই এলাকায় সমুদ্রের জলে প্রচুর হিমশৈল ভাসতে দেখা যায়। যার জন্য, এলাকাটির নামই হয়ে গিয়েছে ‘আইসবার্গ অ্যালি’, অর্থাৎ হিমশৈলের গলি। উল্লেখ্য, ১৯১২ সালে এই হিমশৈলের গলিতেই একটি হিমশৈলের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ডুবে গিয়েছিল সেই সময় প্রযুক্তিগতভাবে সবথেকে এগিয়ে থাকা ‘টাইটানিক’। এবার সেই হিমশৈলের গলি দিয়েই নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ভেসে এল আস্ত এক বরফের পাহাড়। আপাতদৃষ্টিতে এই হিমশৈল ওই এলাকার বাসিন্দাদের কোনও ক্ষতির কারণ না হলেও, এক বড় মাপের হিমশৈল ভেসে আসা আমাদের গ্রহের ভবিষ্যতের জন্য মোটেই ভাল খবর নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
‘স্প্রাইটারটিম’ নামে এক নেটিজেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ হিমশৈলটির একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন। এক মিনিটের ওই ভিডিয়ো ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট বাড়ি। সেগুলির পিছনে সমুদ্রের জলে একটি বিশালাকার তুষারখণ্ড ভাসছে। এক নজরে দেখলে মনে হতে পারে, আচমকা একটি আস্ত পাহাড় এসে হাজির হয়েছে উপকূল এলাকায়। বলাই বাহুল্য ভিডিয়োটি অবিলম্বে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। বিশাল হিমশৈলটি ক্রমে ভূখণ্ডের দিকে ভেসে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই এলাকায় অবশ্য প্রায়শই হিমশৈল ভেসে আসতে দেখা যায়। সবসময় আকারে এত বড় হয় না বটে। সমুদ্রের স্রোতের টানে পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ থেকে কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর এলাকায় প্রতি বছরই রাশি রাশি হিমশৈল ভেসে আসে। কানাডার আর্কটিকের হিমবাহ থেকেও হিমশৈল ভেসে আসে কানাডায়।
?? A giant iceberg has sailed to the Canadian island of Newfoundland pic.twitter.com/lPJ0xSCvDO
— Sprinter (@Sprinter99800) August 1, 2023
তবে, ইদানিং কানাডা উপকূলে এই ভেসে আসা হিমশৈলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যা আবহওয়া বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কটের কারণেই বর্তমানে কানাডা উপকূলে ভেসে আসা হিমশৈলের সংখ্যা এত বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীর বরফের আচ্ছাদনে ফাটল ধরছে। বরফ গলে টুকরো টুকরো হিমশৈলে পরিণত হচ্ছে পৃথিবীর ‘আইস ক্যাপ’। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জানিয়েছে, মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং ইন্টারন্যাশনাল আইস পেট্রল সংস্থার তথ্য অনুসারে চলতি গ্রীষ্মে অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়েছে হিমশৈলের সংখ্যা। তবে, গত দশকে যে পরিমাণ হিমশৈল দেখা গিয়েছিল, তার তুলনায় এখনও পরিমাণ অনেকটাই কম।
২০১৯ সালের মার্কিন ন্যাশনাল আকাদেমি অব সায়েন্সেস, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছিল। তাদের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষতিকর প্রভাব গ্রিনল্যান্ড এলাকার হিমবাহগুলির উপর যতটা পড়বে বলে অনুমান করা হয়েছিল, কার্যক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। আগের অনুমানের তুলনায় প্রায় চারগুণ দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে হিমবাহগুলি।