America President Election: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কীভাবে হয়? কতটা পথ পেরোলে বসা যায় হোয়াইট হাউসের মসনদে?
America President Election: আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন প্রেসিডেন্ট থেকেছেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তিনি ১২ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আর কিছুদিন পরই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হোয়াইট হাউসে আগামী ৪ বছর থাকবেন কে? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন টিভি৯ বাংলার।
ওয়াশিংটন: জর্জ ওয়াশিংটন থেকে জো বাইডেন। ১৭৮৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৪৫ জন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। হোয়াইট হাউসের মসনদে বসেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে এখনও কোনও মহিলা বসেননি। এবার কি ইতিহাস গড়বেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস? বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ৫ নভেম্বর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, কেমনভাবে নির্বাচিত হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট? আমেরিকার একজন প্রেসিডেন্ট কতদিন পদে থাকতে পারেন? আমেরিকার ভোটাররা কি সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন?
আমেরিকার নাগরিকরা কি সরাসরি ভোট দেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে?
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে ভোট দেন না ভোটাররা। তাঁরা ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের ভোট দেন। ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। তাঁদের ভোটকে বলা হয় ইলেক্টোরাল ভোট। মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ২৭০টি ভোট পেতে হয়।
ভারতে যেমন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেশের মানুষ সরাসরি ভোট দেন না। তাঁরা ভোট দিয়ে সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচন করেন। আর সেইসব সাংসদ ও বিধায়কদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তেমনই আমেরিকায় সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনও প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়।
আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট-
১৭৮৯ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় আমেরিকায়। আর সেই নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে প্রেসিডেন্ট হন জর্জ ওয়াশিংটন। ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি।
আমেরিকার ইতিহাসে গ্রোভার ক্লেভেল্যান্ড একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি প্রথম চারবছর হোয়াইট হাউসে থাকার পর হেরে গিয়ে আবার ৪ বছর পর জিতে প্রেসিডেন্ট হন। এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনান্ড ট্রাম্পের কাছে তাঁকে ছোঁয়ার সুযোগ রয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। এরপর বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে হেরে যান। এবার ফের রিপাবলিকান প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট পদে ৩১ দিন থেকে ১২ বছর-
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে কেউ ৩১ দিন ছিলেন। কেউ আবার ১২ বছর থেকেছেন। ১৮৪১ সালে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার ৩১ দিনের মাথায় মৃত্যু হয় উইলিয়াম হেনরি হ্য়ারিসনের। আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে কম দিনের প্রেসিডেন্ট। আর সবচেয়ে বেশিদিন প্রেসিডেন্ট থেকেছেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। ১২ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই মৃত্যু হয় তাঁর।
সর্বোচ্চ কতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকা যাবে-
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে রুজভেল্ট ১২ বছর ছিলেন। কিন্তু, ১৯৫১ সালে আমেরিকার সংবিধানের সংশোধন আনা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পদে সর্বোচ্চ দুটি টার্ম থাকা যাবে। একটি টার্ম ৪ বছরের। ফলে সর্বোচ্চ ৮ বছর প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারেন কোনও মার্কিন নাগরিক।
তবে আমেরিকার সংবিধান অনুসারে, কোনও ব্যক্তি অন্য কোনও প্রেসিডেন্টের টার্মের মাঝপথে প্রেসিডেন্ট হলে, সেক্ষেত্রে অন্য নিয়ম প্রযোজ্য। যেমন প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন কারও মৃত্যু হলে যিনি দায়িত্ব নেবেন, সেক্ষেত্রে দেখা হবে, নতুন যিনি দায়িত্ব নিলেন তিনি কত বছর ওই টার্মে থাকলেন। যদি তিনি ২ বছরের কম সময় ওই টার্মে প্রেসিডেন্ট থাকেন, তাহলে আরও দুটি টার্মে প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে ৯ বছরের বেশিও কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। তবে অন্যের টার্মে ২ বছরের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে বসলে আর একটা টার্মই প্রেসিডেন্ট পদে বসা যাবে।
প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন মৃত্যু-
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন চার জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। আবার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আততায়ী হামলায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। সেই তালিকায় রয়েছেন আব্রাহাম লিঙ্কন, জেমস গারফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাকিনলে এবং জন এফ কেনেডি।
কারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন?
আমেরিকার সংবিধান অনুসারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার জন্য প্রার্থীকে জন্ম থেকে মার্কিন নাগরিক হতে হবে। প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে। কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা হতে হবে।
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কীভাবে প্রার্থী বাছাই হয়?
আমেরিকার রাজনীতিতে দুটি সর্ববৃহৎ দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। এই দুটি দল তাদের অন্তর্বর্তী নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে। দলের সদস্যরা আলোচনা করে, বৈঠক হয়। ভোট হয়। তারপর দুটি দলের নিজেদের জাতীয় কনভেনশন ডেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ঠিক করে।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যিনি হন, তিনিই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এরপর দেশজুড়ে প্রচার করেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। বিতর্কে অংশ নেন দুই দলের দুই প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে লড়ছেন না বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হয়েছেন কমলা হ্যারিস। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন রিপাবলিকার প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বছর ষাটের কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র রয়েছে। কমলার মা শ্যামলা গোপালনের জন্ম তামিলনাড়ুতে। পড়াশোনার জন্য ১৯৫৮ সালে তিনি আমেরিকা যান। সেখানেই এক জামাইকানকে বিয়ে করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর জন্ম কমলা হ্যারিসের।
আমেরিকাকে ‘সব পেয়েছির দেশ’ বলেন অনেকে। সেই দেশে এখনও কোনও মহিলা প্রেসিডেন্টের পদে বসেননি। এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতলে ইতিহাস গড়বেন কমলা হ্যারিস। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবার কোনও মহিলা প্রেসিডেন্টের পদে বসবেন। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্টও তিনিই হয়েছেন। এবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়তে পারেন কি না, সেটাই দেখার।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)