Canada-India: বাড়ছে ক্ষোভ! কানাডার সঙ্গে ঠান্ডা-যুদ্ধে শেষ হাসি হাসবে ভারত?
Canada-India: ভারতের সঙ্গে সংঘাত বাড়িয়ে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত ঘনিষ্ঠ দেশগুলির কাছে নিজ্জরের হত্যার বিষয়টি তুলে ধরেছে কানাডা। হরদীপ ইস্যুতে ট্রুডোর ভারত-বিরোধী মন্তব্য নিয়ে ব্রিটেন সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি। তবে আমেরিকার তরফে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
নয়া দিল্লি: কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো একবার মজা করে বলেছিলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় যতজন শিখ মন্ত্রী আছেন, তার থেকে বেশি শিখ মন্ত্রী রয়েছেন তাঁর মন্ত্রিসভায়। রসিকতার ছলে বলা ট্রুডোর এই কথাটি প্রমাণ করে কানাডায় শিখ সম্প্রদায়ের প্রভাব কীভাবে বাড়ছে। কানাডায় শিখদের স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের পুনর্জন্ম হচ্ছে। যার চরম প্রভাব পড়ছে দুই দেশের সম্পর্কে। বন্ধ হতে বসেছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য।
পঞ্জাবের বাইরে কানাডাতেই সবথেকে বেশি শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। সংখ্যাটা প্রায় ১৮ লক্ষ। যাঁদের একটা বড় অংশ পৃথক খালিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে। বলা হয়, জাস্টিন ট্রুডোর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পিছনে এই খালিস্তানপন্থীদের সমর্থন রয়েছে। ট্রুডোর এই খালিস্তান-নীতি নিয়েই এবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন কানাডার মূল অধিবাসীরা। শুধু তাই নয়, কানাডায় বসবাসকারী অন্য ভারতীয়রাও খলিস্তানিদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠছেন।
খালিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কেটিএফ-এর প্রধান হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার প্রতিবাদে কানাডায় বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যান শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। জুলাইয়ের ৮ তারিখ টরন্টোতে ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে জড় হন কয়েকজন খালিস্তানপন্থী। তাদের পাল্টা সমাবেশ করতে দেখা যায় খালিস্তান-বিরোধীদের। দুই পক্ষই কয়েক ঘণ্টা ধরে একে অপরের বিপক্ষে স্লোগান দেয়।
কানাডায় খালিস্তানপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লি। জি-২০ সম্মেলনের শেষ দিনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কড়া কথা শোনান মোদী। যেভাবে কানাডার আশ্রয়ে থেকে এই ভারত বিরোধীরা দিনের পর দিন সংগঠিত অপরাধ করে চলেছে, তাতে কানাডার কাছেও বিষয়টি উদ্বেগের হওয়া উচিত বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কে শোনে কার কথা! উল্টে হরদীপের হত্যার জন্য এখন পাল্টা ভারতকেই দুষছেন ট্রুডো।
কানাডার মাটিকে ব্যবহার করে যে ভাবে খালিস্তানিরা ভারত-বিরোধী কাজ চালাচ্ছে, তাতে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে বিদেশ মন্ত্রকও। ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ না হলে, কানাডার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা অসম্ভব বলে জানানো হয়। এরপরই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে কানাডা। অক্টোবর মাসেই এই বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। ফলে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কবে শুরু হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সংঘাত বাড়িয়ে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত ঘনিষ্ঠ দেশগুলির কাছে নিজ্জরের হত্যার বিষয়টি তুলে ধরেছে কানাডা। হরদীপ ইস্যুতে ট্রুডোর ভারত-বিরোধী মন্তব্য নিয়ে ব্রিটেন সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি। তবে আমেরিকার তরফে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগগুলো করেছেন তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
কানাডা যতই কূটনীতিক চাল চালুক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ পর্যন্ত এই ঠাণ্ডা যুদ্ধে জয়ী হবে ভারতই। কারণ কানাডার মূল অধিবাসীরাই বিদেশনীতির জন্য ট্রুডোর বিরুদ্ধে যে কোনওদিন বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারেন।