মিউনিখ: শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কতটা জনপ্রিয়, তা আরও একবার দেখা গেল রবিবার (২৬ জুন)। জি-৭ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এদিনই জার্মানিতে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী। জর্মানি সফরের প্রথমদিনে, মিউনিখে অনাবাসী ভারতীয়দের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তিনি। আর প্রথমদিনই জার্মানি মাতিয়ে দিলেন তিনি। সাফ জানালেন আগে ভারতীদের মনোভাব ছিল ‘চলতা হ্যায়’। অর্থাৎ, কোনও কাজ হল ভাল, না হলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু, এখন তা বদলে গিয়েছে। এখন ভারতীয়রা বলছেন, ‘করনা হ্যায়’, অর্থাৎ, করে দেখাতে হবে। এই মানসিকতার বদলের ফলেই, বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ চলাকালীন, মিউনিখে বারবারই উঠল ‘মোদী মোদী’ স্লোগান।
সম্প্রতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্টে নরেন্দ্র মোদীর আমলে দেশে গণতন্ত্র কতটা সুরক্ষিত, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিন, বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণতন্ত্র ভারতীয়দের গর্ব। প্রত্যেক ভারতীয়র ডিএনএ-তেই গণতন্ত্র প্রোথিত আছে। ভারতকে তিনি গণতন্ত্রের মা বলেও অভিহিত করেন। তবে, এই গণতন্ত্রের গর্বের ইতিহাসে একটিই কালো দাগ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তা হল, ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন জারি করা জরুরি অবস্থা। সেই সময় গণতন্ত্রকে পণবন্দি করা হয়েছিল, পিষে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল গণতন্ত্রকে। কিন্তু, সেই ষড়যন্ত্রের জবাব দিয়েছিলেন দেশের নাগরিকরা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংস্কৃতি, খাদ্য, পোশাক, সঙ্গীত ও ঐতিহ্যের বৈচিত্র্যে গণতন্ত্র বৈচিত্রময়।
এরপরই প্রধানমন্ত্রী বলেন শিল্প বিপ্লবের কথা। তিনি জানান, গত শতাব্দীতে জার্মানির মতো বিশ্বের এগিয়ে থাকা দেশগুলি সেই শিল্প বিপ্লবের লাভ ঘরে তুলেছিল। তবে, ভারত সেই সময় ইংরেজদের দাসত্বে থাকায়, সেই সুযোগ হারিয়েছিল। এখন যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাক্ষী হচ্ছে গোটা বিশ্ব, ভারত আর পিছিয়ে নেই। বরং আমাদের দেশ সেই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন সদর্থক পরিবর্তনের কথাও প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদী জানান, বর্তমানে স্টার্টআপের যুগ। এই সময়ে ভারতে গড়ে প্রতি ১০ দিনে একটি ইউনিকর্ন জন্ম নিচ্ছে। ভারতের প্রতিটি গরিব মানুষ এখন বিনামূল্যে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে, গত দুই বছর ধরে ৮০ কোটি দরিদ্রকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, বর্তমানে দেশের প্রতিটি গ্রাম উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়েছে। প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে গিয়েছে। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ৯৯ শতাংশ গ্রামে পরিশ্রুত রান্নার জ্বালানি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সঠিক সময়ে, সঠিক অভিপ্রায় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ‘সবকা বিকাশ’কে মূল মন্ত্র করে এগোনোর ফলে তথ্য প্রযুক্তি থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি – সব ক্ষেত্রেই ভারত এখন এগিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন মোদী। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সমস্যা এখন আর ভারতে সরকারি নীতির মধ্যে আবদ্ধ নেই। বরং, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য নেওয়া সরকারি নীতিগুলি, আপামর ভারতবাসীর জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। নাগরিকরা দেশের জন্য তাঁদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছেন। ‘চলতা হ্যায়’ এর গয়ংগচ্ছ মনোভাব ছেড়ে, আজকের ভারতীয়রা বলছেন, ‘করনা হ্যায়’। আর এই কারণেই ভারত এখন আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।