কলম্বো: ভয়ঙ্কর অবস্থা শ্রীলঙ্কায়। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটকে কেন্দ্র করে দ্বীপরাষ্ট্রে ক্রমে বাড়ছে বিক্ষোভ-হিংসা। এই পরিস্থিতিতে, বৃহস্পতিবার সেই দেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক ও পড়াশোনা করতে যাওয়া ভারতীয় ছাত্রদের অবিলম্বে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিল ভারতীয় দূতাবাস। এর জন্য দূতাবাসের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। ছাত্র ও অনাবাসী ভারতীয়দের নাম ও অন্যান্য তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য দুটি পৃথক লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। দূতাবাসে পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এই লিঙ্কগুলি কোনও নতুন লিঙ্ক নয়। এই লিঙ্কে আগেও নাম ও অন্যান্য তথ্য নথিভুক্ত করা হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই তথ্যভান্ডারই আপডেট করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রনিল বিক্রমাসিংঘের নাম ঘোষণা করেছিলেন সেই দেশের রাষ্ট্রপতি গোটবায়া রাজাপক্ষ। তার পরেরদিনই নয়া লঙ্কান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন শ্রীলঙ্কার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গোপাল বাগলে। ভারতীয় হাই কমিশন থেকে জানানো হয়, হাইকমিশনার শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য, ভারত ও শ্রীলঙ্কা-ভারত সহযোগিতার বিষয়ে দুই পক্ষের আলোচনা হয়েছিল। টুইট করে দূতাবাস আরও জানিয়েছিল, গণতান্ত্রিক পথে কীভাবে শ্রীলঙ্কার সকল নাগরিকের কল্যান সাধন করা যায়, সেই বিষয়েও রনিল বিক্রমাসিংঘের সঙ্গে কথা বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
All #Indian nationals living in #SriLanka are requested to kindly register their details on https://t.co/S0LRFwa1gK pic.twitter.com/NQDSmpSed2
— India in Sri Lanka (@IndiainSL) May 19, 2022
গত সপ্তাহে প্রথমে গুঞ্জন রটেছিল, শ্রীলঙ্কানদের ভিসা দিচ্ছে না ভারত। পরে অবশ্য, ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হয়। হাইকমিশন জানিয়েছিল, ভিসা-কর্মীরা অধিকাংশই শ্রীলঙ্কার নাগরিক। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা অফিসেই আসতে পারছেন না। সেই কারণে কিছু পরিচালনগত অসুবিধা তৈরি হয়েছে এবং ভিসা দেওয়ার কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে।
শ্রীলঙ্কায় এখন তীব্র হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক সঙ্কট। অর্থনৈতিক মন্দাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল, তা এখন রাষ্ট্রপতি গোটবায়া রাজাপক্ষ এবং শ্রীলঙ্কার সংসদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল দ্বিতীয় গোটবায়া রাজাপক্ষ মন্ত্রিসভা থেকে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ ছাড়া ২৬ জন মন্ত্রীই পদত্যাগ করেছিলেন। সেই থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। রনিল বিক্রমাসিংঘের কেয়ারটেকার সরকার গঠন করেও, সেই বিক্ষোভের আঁচ কমাতে পারেননি রাষ্ট্রপতি। বিরোধী রাজনৈতিক দল তো বটেই, রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষর পদত্যাগ চাইছেন অধিকাংশ লঙ্কান নাগরিকও।
তবে, এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা এতই সঙ্গিন যে নির্বাচন আয়োজনের মতো পরিস্থিতিও নেই। প্রথমত, দেশে কাগজের ব্যাপক অভাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন আয়োজনে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, যা বর্তমানে শ্রীলঙ্কার কোষাগার থেকে খরচ করা অসম্ভব। বস্তুত, বুধবারই তারা জানিয়েছে দেশে আর কোনও জ্বালানী তেল নেই। তাই, তেল কেনার জন্য নাগরিকদের লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। কাজেই শ্রীলঙ্কার অস্থিরতা অদূর ভবিষ্যতে দূর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।