China Build Aircraft Near Arunachal: আবার অরুণাচল! ভারতের অদূরে তৈরি হয়ে গেল চিনের ‘আকাশরক্ষীদের মহল’, চিন্তায় নয়াদিল্লি?
India-China Relation: গত এপ্রিল মাস থেকে তিব্বতের বুকে ঘাঁটি তৈরিতে তৎপরতা বাড়িয়েছিল চিন। বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরির কাজ অনেকটা সম্পন্ন হতেই যুদ্ধবিমান, ড্রোন-সহ একাধিক বায়ু সেনার সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয় সেখানে। ইতিমধ্যেই চিনা CH-4 ড্রোন মোতায়েনও রয়েছে এই ঘাঁটিতে। কিন্তু ভারতের এত কাছে হঠাৎ করেই বা কেন বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরি করল বেজিং? অরুণাচল প্রদেশ ও অসমের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখ নয় তো?

নয়াদিল্লি: কৌশলী চিন, উদ্বেগ বাড়ছে নয়াদিল্লির? ভারত-চিন সীমান্ত অর্থাৎ ম্যাকমোহন লাইন থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে তৈরি হল লাল ফৌজের ৩৬টি স্থায়ী ঘাঁটি। তিব্বতে বায়ুসেনা আরও শক্তিশালী করল বেজিং। যা ধরা পড়ল স্যাটেলাইট ছবিতে। এটা কি ভারতের বিরুদ্ধে আবার ষড়যন্ত্র? সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছেন একাংশ।
ডোকলাম সংঘাতের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা LAC-তে পরিস্থিতি সবে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর শাংহাই সফরের পর ভারত থেকে চিনের সরাসরি বিমান পরিষেবাও শুরু হয়েছে। কিন্তু চিনের আচরণ বদলানোর নয়। এবার স্যাটেলাইট ইমেজে ধরা পড়ল চিনা ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত, বলছেন একাংশ। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ও চিন সীমান্তে বিতর্কিত ম্যাকমোহন লাইন থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ৩৬টি মজবুত স্থায়ী ঘাঁটি বানিয়েছে চিন। প্রতিটি ঘাঁটিই আকৃতিতে এতটাই বড় যে আস্ত যুদ্ধবিমান ভিতরে রাখা যাবে। ইতিমধ্যেই সেখানে ড্রোন মজুত রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং থেকে ১০৭ কিলোমিটার দূরে চিনা বায়ুসেনার তৎপরতায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
গত এপ্রিল মাস থেকে তিব্বতের বুকে ঘাঁটি তৈরিতে তৎপরতা বাড়িয়েছিল চিন। বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরির কাজ অনেকটা সম্পন্ন হতেই যুদ্ধবিমান, ড্রোন-সহ একাধিক বায়ু সেনার সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয় সেখানে। ইতিমধ্যেই চিনা CH-4 ড্রোন মোতায়েনও রয়েছে এই ঘাঁটিতে। কিন্তু ভারতের এত কাছে হঠাৎ করেই বা কেন বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরি করল বেজিং? অরুণাচল প্রদেশ ও অসমের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখ নয় তো? চিনের এই কৌশল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন এয়ার চিফ মার্শাল বিএস ধানোয়া। এদিন তিনি বলেন, “ডোকলাম সংঘাতের আগেও আমি বলেছিলাম,তিব্বতে পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের বিমানঘাঁটি আমাদের মূল সমস্যা নয়। মূল সমস্যা হল, চিনা সেনার তৎপরতা ও আগ্রাসী মনোভাব। LAC-র এত কাছাকাছি এরকম আধুনিক ঘাঁটি তৈরির অর্থই হল, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে পারে চিন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাক্সারের স্যাটেলাইট চিত্রে মাটির উপরে ঘাঁটি তৈরির ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই মাটির নিচে সুড়ঙ্গে জ্বালানি ও গোলাগুলি মজুত করে রাখতে পারে লালফৌজ। ডোকলামের মতো সংঘাতের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে ফের তৈরি হলে চিনা সেনা লুনজে থেকেই পরিচালিত হবে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। স্থায়ী ঘাঁটিগুলিতে যুদ্ধবিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ড্রোন মোতায়েন করা যাবে।
অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনা কর্তা এয়ার মার্শাল অনিল খোসলা-র আশঙ্কা, “তিব্বতের লুনজে ঘাঁটির আধুনিকীকরণের ফলে সামগ্রিকভাবে এশিয়ার শান্তি ও স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হবে। বিশেষত, গালওয়ান সংঘাতের পর থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর। স্থায়ী, মজবুত ঘাঁটিতে প্রিসিশন গাইডেড মিসাইল, গুলি বা ড্রোন হামলা হলেও যুদ্ধবিমানের ক্ষতি হয় না। অধিক উচ্চতায় লড়াইয়ে এতে খানিকটা বাড়তি সুবিধা মেলে।”
উল্লেখ্য, চিনের তিংরি, লুনজে ও বারাং-এর মতো অন্তত তিনটি বায়ুসেনা ঘাঁটি রয়েছে LAC-র কাছাকাছি। যার মানে, ভবিষ্যতে ভারত ও চিনের মধ্যে যুদ্ধ হলে ভারত যদি অরুণাচল, সিকিম, উত্তরাখণ্ড, লাদাখ থেকে যুদ্ধবিমান পাঠায়, তাহলে চিনও ওই তিন ঘাঁটি থেকে পাল্টা মোকাবিলা করতে তৈরি হচ্ছে। ম্যাক্সারের স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েছে চিনের CH-4 ড্রোন ইতিমধ্যেই নয়া চিনা ঘাঁটির টারম্যাকে মোতায়েন রয়েছে। ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় যুদ্ধে পারদর্শী এই ধরণের ড্রোন। ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল সেন্সরের মাধ্যমে একজন চালক যে কোনও কমান্ড সেন্টার থেকে এই ড্রোনের মাধ্যমে শত্রুর উপরে গোলাগুলি চালাতে পারে। তবে ভারতও এই রকম ড্রোনের মোকাবিলায় ৩৫০ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন মুলুকের কাছ থেকে ‘স্কাই গার্ডিয়ান ড্রোন’ কিনছে। আর এখনই প্রস্তুত রয়েছে ইজরায়েলের কাছ থেকে কেনা হেরন ড্রোন। লাদাখ, অরুণাচল, সিকিম, উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের গায়ে সবমিলিয়ে ৩৪১৭ কিলোমিটার নয়া স্ট্র্যাটেজিক রাস্তা তৈরি। তাওয়াং থেকে অরুণাচলের মধ্যে সেলা টানেল ও শ্রীনগর থেকে লাদাখের মধ্যে জোজিলা টানেলের মাধ্যমে সেনা মুভমেন্ট করতে পারবে দিল্লিও। ২০২০-র গ্যালোয়ান সংঘাতের পর লাদাখের নায়োমা বিমানঘাঁটি ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অরুণাচলের এয়ারফিল্ডকেও ৩২টি হেলিপ্যাডের যোগ্য করে তোলা হচ্ছে। রাফাল, তেজসের মতো যুদ্ধবিমানও প্রস্তুত। চিনের যে কোনও বেয়াদপির জবাব দিতে জল, স্থল ও নৌসেনার যৌথ সমন্বয়ে গঠিত ‘থিয়েটার কমান্ড’-ও চূড়ান্ত ছাড়পত্রের অপেক্ষায়।
