Indonesia: স্কুলপড়ুয়ারা কি গিনপিগ? প্রশাসনের উদ্ভট পরীক্ষার জেরে সারাক্ষণই আছে ঝিমিয়ে

Indonesia schools start at 5:30 AM: সূর্যের আলো তখনও ফোটেনি। অন্ধকার রাস্তা দিয়ে স্কুল ইউনিফর্ম পরে টলোমলো পায়ে হেঁটে চলেছে একদল কিশোর-কিশোরী। দেখে মনে হচ্ছে যেন হলিউডি সিনেমার পর্দা থেকে উঠে আসা জ়ম্বি।

Indonesia: স্কুলপড়ুয়ারা কি গিনপিগ? প্রশাসনের উদ্ভট পরীক্ষার জেরে সারাক্ষণই আছে ঝিমিয়ে
ভোর সাড়ে পাঁচটায় স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা

| Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Mar 15, 2023 | 3:07 PM

জাকার্তা: সূর্যের আলো তখনও ফোটেনি। অন্ধকার রাস্তা দিয়ে স্কুল ইউনিফর্ম পরে টলোমলো পায়ে হেঁটে চলেছে একদল কিশোর-কিশোরী। দেখে মনে হচ্ছে যেন হলিউডি সিনেমার পর্দা থেকে উঠে আসা জ়ম্বি। কিন্তু না, এটা কোনও সায়েন্স ফিকশন সিনেমার কাহিনি নয়। এটা ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব নুসা টেংগারা প্রদেশের রাজধানী কুপাং শহরের ঘুম বঞ্চিত স্কুল পড়ুয়াদের ছবি। ইন্দোনেশিয়ার একেবারে পূর্ব প্রান্তের এই শহরে গত মাস থেকে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে এক পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। গভর্নর ভিক্টর লাইসকোদাতের মতে, একেবারে ভোর থাকতে পঠন-পাঠন শুরু করলে স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ আরও জোরদার হবে। আর তাই, ইন্দোনেশিয়ার যেখানে সাধারণত সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে স্কুল শুরু হয়, সেখানে কুপাং শহরের ১০টি উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ-শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভোর সাড়ে পাঁচটায় ক্লাসে যেতে হচ্ছে।

তবে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিভাবকদের মতে, এই ব্য়বস্থা চালু হওয়ার পর থেকে তাঁদের সন্তানদের সারাক্ষণই ক্লান্তি গ্রাস করছে। শুধু তাই নয়, অন্ধকার থাকতে বাড়ি থেকে বের হওয়ায় সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়েও তারা চিন্তিত। অভিভাবকদের দাবি, তাদের সন্তানরা যখন রাস্তায় বের হচ্ছে সেই সময় রাস্তাঘাট একাবারে শুনশান অবস্থায় থাকে। অন্ধকার, ফাঁকা রাস্তায় তাঁদের সন্তানদের নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। শহরের বাসিন্দা, রাম্বু আতার মেয়ে ১৬ বছরের ইউরেকাকে এখন ভোর ৪ টেয় ঘুম থেকে উঠে স্কুলের জন্য তৈরি হতে হয়। তারপরও সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছনোর জন্য তাকে মোটরবাইক ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে রাম্বু আতা বলেছেোন, “এখন ও যখনই বাড়িতে আসে, ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বাড়ি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে। ওর সবসময়ই ঘুম পায়।” বিরোধী দলের নেতারাও কুপাং প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।

নুসা সেন্ডানা ইউনিভার্সিটির শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মার্সেল রোবটও মনে করছেন, এই নয়া পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এএফপিকে তিনি বলেছেন, “শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রচেষ্টার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। বরং, দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনের তুলনায় ঘুম কম হতে থাকলে, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হত পারে। তাদের আচার-আচরণে তার প্রভাব পড়তে পারে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘুম, তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত খারাপ। এতে তাদের মানসিক চাপ ক্রমে বাড়বে।” ২০১৪ সালেই এই বিষয়ে একটি গবেষণা করেছিল ‘মার্কিন আকাদেমি অব পেডিয়াট্রিক্স’। তাদের গবেষণা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে, যে কোনও স্কুলেই সকাল সাড়ে আটটা বা তার পরে পঠন-পাঠন শুরু করা উচিত।

তবে এত সমালোচনা সত্ত্বেও কুপাং প্রশাসন এই অদ্ভূত পরীক্ষা চালিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর। তবে শুধু স্কুল পড়ুয়ারাই নয়, স্কুলের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদেরও এখন সকাল সাড়ে পাঁচটায় দিন শুরু করতে হচ্ছে। একাংশের কর্মীরা এই ব্যবস্থায় খুশি। রেনসি সিসিলিয়া পেলোকিলা নামে এক সরকারি স্কুলের কর্মচারী এএফপিকে জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থার ফলে তাঁর জীবনযাত্রা আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। কারণ, প্রতিদিন সকালে তাদের স্কুলে শরীর চর্চা হয়। আগে তিনি ওই সময় ঘুমোতেন। এখন, তিনি ভোরবেলা স্কুলে চলে আসায়, কর্মক্ষেত্রে শরীর চর্চা সেশনে নিয়মিত যোগ দিতে পারছেন তিনি। তবে, এই তাঁর মতো আনন্দিত খুবই কম সংখ্যক ব্যক্তি। অধিকাংশই সরকারি এই নিয়ম নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।