বাংলাদেশে অত্যাচার এবং হিংসার স্বীকার হচ্ছে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুরা। ট্রাম্পের গোয়েন্দা প্রধান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বার বার এঁদের গলায় শোনা গিয়েছে উদ্বেগের সুর। যদিও এই অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ বাংলাদেশের সেনা সমর্থনে গঠিত অন্তবর্তী সরকারের প্রধান মুহম্মদ ইউনুস।
ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত হয়েছে সেই অন্তবর্তী সরকারের ১০০ দিন। আর তার পরেই প্রকাশ্যে এসেছে সরকারের রিপোর্ট কার্ড। সেই রিপোর্ট বলছে বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’ সম্প্রদায়ের মানুষ বার বার হিংসার স্বীকার হয়েছেন ইউনুস সরকারের ভুলের কারণে।
বার্লিন ভিত্তিক নাগরিক সমাজ সংস্থার বাংলাদেশ শাখা ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ বা ‘টিআইবি’-এর সেই রিপোর্ট অনুসারে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৫ আগস্ট পালাতে বাধ্য করার পর, যারা যারা সেই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন তাঁরা সকলেই কম-বেশি হিংসার স্বীকার হয়েছেন।
‘আইন শৃঙ্খলা’ কলমের অধীন সেই রিপোর্টে ‘আইক্য পরিষদ’-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে জানানো হয়েছে যে ৫-২০ অগস্টের মধ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ২,০১০টি। সেই সব ঘটনায় মাত্র ১৬ দিনে নয় জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আইন পরিষদ হল বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি মানবাধিকার সংগঠন।
টিআইবির সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে ‘বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব বাড়ছে। অক্টোবরে দুর্গাপুজোর সময় নিরাপত্তা উদ্বেগ তার প্রমাণ’। প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পরেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়, বার বার ‘টার্গেট’ হয়ে উঠেছে কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে। ফলে উৎকন্ঠা এবং উদ্বেগের মধ্যেই পালন করতে হয়েছে দুর্গাপুজো।
চট্টগ্রামে, এক হিন্দু সন্ন্যাসী এবং অন্যান্য ১৮ জন হিন্দুর বিরুদ্ধে গেরুয়া ওড়ানোর অপরাধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৮ নভেম্বরের সেই প্রতিবেদন অনুসারে প্রথম ১০০ দিনের এই সব হিংসার ঘটনার জন্য মুহাম্মদ ইউনুসকে দায়ী করা হয়েছে। এমনকি সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় ঠিক করে তদন্ত করা হয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে।
রিপোর্ট অনুসারে, কম পক্ষে ২২টি জায়গায় বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হামলার কারণে বাতিল হয়ে গিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে প্রদর্শনী বা মেলাতেও। হামলা হয়েছে আর্ট আকাদেমিতে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরেই প্রথম তিন দিনে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর অন্তত ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে দেখেছে, ৫জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসকে এই বিষয়ে একটি খোলা চিঠিও দিয়েছেল। হাজার হাজার হিন্দু সুরক্ষার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হিন্দুদের উপর হামলার সমালোচনা করেছেন এবং সুরক্ষার বিষয়টির উপরে নজর দেন। যদিও মুহাম্মদ ইউনুস এই সব অবিযোগ খানিকটা অস্বীকার করেও বলেন বিষয়টিকে ‘অতিরঞ্জিত’ করা হচ্ছে। তবে সত্যিটা কী ‘অতিরঞ্জিত’ নাকি ‘রুঢ় বাস্তব’ কোনটা? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!