তেহরান: হার মানেননি তাঁরা। দু’মাসের বেশি সময় ধরে হিজাব বিরোধী আন্দোলনে পা মিলিয়েছেন তাঁরা। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ঝরেছে কত রক্ত। প্রাণ গিয়েছে বহু মানুষের। শেষ পর্যন্ত পিছু হটল ইরান প্রশাসন! প্রতিবাদীদের রোষানলে ‘নীতি পুলিশ’ ব্যবস্থা নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ইরান সরকার। প্রসিকিউটর জেনারেলকে উদ্ধৃত করে একথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ অনুযায়ী, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহম্মদ জাফর মোন্টাজ়েরি বলেছেন, ‘বিচারব্যবস্থার সঙ্গে নীতি পুলিশির কোনও সম্বন্ধ নেই।’ প্রসঙ্গত, ইরানে খুব কঠোর পোশাক বিধি প্রযোজ্য। সেই পোশাকবিধি অনুযায়ী, সেখানকার মহিলাদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। আর যথাযথভাবে তা না পরা হলেও, রাষ্ট্রের তরফে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। আর সেই শাস্তির শিকার হয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি। তিনি যথাযথভাবে হিজাব না পরায় নীতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারপর পুলিশি হেফাজতেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন মাহসার উপর অত্যাচার করা হয়েছিল। তার জেরেই মৃত্যু হয় মাহসার।
এর পরই ইরানের পশ্চিমে কুর্দিস্তান অঞ্চল থেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। মাহসা আমিনির মৃত্যুর ন্যায়বিচার চান ইরানের নাগরিকরা। হিজাবের বিরুদ্ধে ওঠে আওয়াজ। ইরানের পথে-ঘাটে মহিলারা হিজাব খুলে ফেলেন। কেটে ফেলেন নিজেদের চুল। আর তাঁদের এই কাজে এগিয়ে আসেন পুরুষরাও। এই বিক্ষোভ দমনে দেদার গ্রেফতারি ও গুলি চালানো হয় প্রশাসনের তরফে। এবার দীর্ঘ দু’মাসের বেশি বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলার পর এক ধাপ এগোল তাঁদের আন্দোলন। এতদিনের আন্দোলনের জেরে নিষিদ্ধ করা হল ‘নীতি পুলিশি’।
‘নীতি পুলিশি’ আগে গস্ত-ই এরশাদ বা ‘গাইডেন্স পেট্রোল’ (Guidance Patrol) নামে পরিচিত ছিল। ইরানের প্রেসিডেন্ট মেহমুজদ আমাদিনেজাদের আমলে এই গাইডেন্স পেট্রোল শুরু হয়েছিল। ২০০৬ সালে এই দল কাজ শুরু করে। ইরানে যে কঠোর পোশাকবিধি কার্যকর রয়েছে তা সঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে কি না তা তদারকি করাই হল ‘নীতি পুলিশ’-র কাজ। অর্থাৎ, ইরানে পোশাকবিধি কেউ অমান্য করলে তাঁকে বা তাঁদের আটক করে ব্যবস্থা নেয় ‘নীতি পুলিশ’। যেমনটা মাহসা আমিনির ক্ষেত্রে হয়েছিল। ইরানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত এই ‘নীতি পুলিশ’। ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ঠিক করা ইসলামিক নীতি ও নৈতিকতা মানুষের দ্বারা পালিত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা এই সংস্থার কাজ।’নীতি পুলিশ’-র একটি ইউনিট সবসময় ভ্যান নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় টহল দেয়। কেউ যথাযথ পোশাকবিধি মেনে না চললে তাঁদের আটক করে এই ‘নীতি পুলিশ’। এদিকে এই মুহূর্তেই হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন প্রত্যাহার করা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে গতকালই জাফার মোনটাজ়েরি জানিয়েছেন, মহিলাদের হিজাব পরা নিয়ে কোনও আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে কি না সেই বিষয়ে পার্লামেন্ট ও বিচারব্যবস্থা কাজ করছে।