জেরুজালেম: বড় ঘোষণা নেতানিয়াহুর। হিজবুল্লার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করল ইজরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাংবাদিক বৈঠক করে এই ঘোষণা করেন। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের অবশেষে অবসান ঘটার ইঙ্গিত মিলল। তবে যুদ্ধবিরতিতেও একাধিক শর্ত রেখেছে ইজরায়েল।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার, ২৭ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। আপাতত হিজবুল্লার উপরে হামলা চালাবে না ইজরায়েল। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইজরায়েলের সিকিউরিটি ক্যাবিনেট দীর্ঘ আলোচনার পর যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কতদিন এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে, তা নির্ভর করছে লেবাননে কী হচ্ছে, তার উপরে। যদি যুদ্ধবিরতি কোনওভাবে লঙ্ঘিত হয়, তবে ইজরায়েল সর্বশক্তি দিয়ে তার জবাব দেবে।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা হামাসকে আলাদা করব, বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনব এবং গাজা যাতে ইজরায়েলের জন্য আর ঝুঁকি হয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করব। লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না।”
হঠাৎ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পিছনে তিনটি কারণ ব্যাখা করেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। এগুলি হল –প্রথমত, ইরানের হুমকিতে মনোনিবেশ করা। দ্বিতীয়ত, ইজরায়েলি সেনাবাহিনীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র মজুত করার জন্য সময় দেওয়া এবং তৃতীয়ত, বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা। নেতানিয়াহুর দাবি, যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন থেকেই হামাস হিজবুল্লার উপরে নির্ভর করেছে। হিজবুল্লার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে হামাসকে সম্পূর্ণ একা করে দেওয়াই লক্ষ্য ইজরায়েলের।
লেবাননের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তির পিছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যস্থতা করেছেন।
যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইজরায়েলের শীর্ষকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ লেবানন থেকে ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লা বউ হাবিব বলেছেন, ইজরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ লেবাননে অন্তত পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন থাকবে। ইজরায়েলের হামলায় ধ্বংস হওয়া পরিকাঠামোগুলি পুনর্গঠনে আমেরিকা সাহায্য করতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের সঙ্গে ইজরায়েলের যে যুদ্ধ শুরু হয়, তা-ই ধীরে ধীরে হিজবুল্লার দিকে ঘুরে যায়। গাজা, প্যালেস্তাইনের পাশাপাশি নতুন নিশানা হয় লেবানন। যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত হিজবুল্লার প্রধান নাসারুল্লাহ, তার উত্তরসূরী সহ প্রায় ৩৭০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশেরই মৃত্যু গত দুই মাসের মধ্যে হয়েছে। অন্যদিকে, হিজবুল্লার হামলায় ইজরায়েলে কমপক্ষে ৮২ সেনা ও ৪৭ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।