এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে,
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এল মানুষ-ধরার দল, গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে,
— এ হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতার কয়েকটি লাইন। এর বিরাট মিল পাওয়া যাচ্ছে একটা ছোট্ট দেশের সঙ্গে। এ কারা এল লোহার হাতকড়ি নিয়ে? এককথায় গোটা ইউরোপ। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল সকলে। সাম্রাজ্যবাদের যুগে আফ্রিকায় যে কলোনিয়াল রুলারদের শোষণ দেখে রবীন্দ্রনাথ এই লাইনগুলো লিখেছিলেন, তার অনেক মিল পরবর্তীতেও পাওয়া গিয়েছে।
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইউরোপিয়ানরা আফ্রিকায় ঢোকার চেষ্টা শুরু করে। যদিও, উপকূল ছেড়ে তারা বেশি ভিতরে ঢুকতে পারেনি। কারণ ছিল ম্যালেরিয়া। তারপর, কলকাতায় বসে রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কার করলেন। রোগের চিকিত্সা সহজ হলো। স্কটিশ মিশনারি ডেভিড লিভিংস্টোন আফ্রিকায় গিয়ে সেখানকার মানুষকে খ্রিস্টান বানানো শুরু করলেন। তাঁকে দেখে অনেকে উত্সাহিত হলেন।
ইউরোপে ততদিনে শিল্প বিপ্লবের ১০০ বছর হয়ে গিয়েছে। হু হু করে জিনিস তৈরি হচ্ছে। কেনার লোক নেই। তাই ঠিক হল, চলো আফ্রিকা। সেখানে গিয়ে জিনিস বিক্রি করতে হবে। ১৮৮০ সাল থেকে আফ্রিকার দখল নিয়ে ইউরোপিয়ানদের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেই গোটা মহাদেশটা ইউরোপের দখলে চলে যায়। তবে, বেশিরভাগটাই দখলে ছিল ব্রিটেন আর ফ্রান্সের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় সব দেশই স্বাধীন হয়ে যায়। যদিও, আফ্রিকায় ডি-কলোনাইজেশন পর্ব শেষ হতে লেগে যায় আরও প্রায় তিন দশক। শেষ ১৯৭৭ সালে ফ্রান্সের হাত থেকে মুক্তি পায় জিবুতি। যদিও, তারপরও আফ্রিকার নানা দেশে সেনা রেখে দিয়ে পরোক্ষে কর্তৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ইউরোপ।
প্রায় চার দশক পর এ বার সেই ব্রিটিশের ডার্ক কন্টিনেন্ট থেকে এক এক করে মুছে যাচ্ছে ঔপনিবেশিকতাবাদের শেষ চিহ্নটুকুও। কিছুদিন আগে মরিশাসকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ ছেড়ে দিয়ে আফ্রিকা থেকে পাকাপাকিভাবে পাততাড়ি গুটিয়েছে ব্রিটেন। এ বার পালা আইভরি কোস্টের। এটা এমন দেশ, যারা ফুটবল বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই না করলে তাদের নামটুকুও শোনা যায় না। ছোট্ট দেশ আইভরি কোস্ট। সেই তারাই শক্তিশালী ফ্রান্সকে তাদের দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। আসলে কয়েক দশক ধরে সেখানে ফরাসি সেনার ঘাঁটি রয়েছে। সেই ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে এ বার দেশটি।